বিশেষ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ ।।
বাজিতপুরের একটি হিন্দু পরিবার প্রভাবশালী মহল দ্বারা উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে। পরিবারটির ওপর হামলা ও লুটপাট চালিয়ে তাদেরকে দেশছাড়া করার হুমকি দেয়া হচ্ছে মর্মে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্য স্থানীয় বাজিতপুরের সাপ্তাহিক ইছামতি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং ‘সুহৃদ’ নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের চেয়ারম্যান শিল্পী বণিক (৪৯) ঘটনার বিবরণ দিয়ে শুক্রবার ২১ জুলাই সকালে জেলা প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে শিল্পী বণিক বলেন, তাদের বাড়ি বাজিতপুর উপজেলা সদরের পালপাড়ায়। তার বাবা লাল মোহন বণিক একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে শহীদ হন। পূর্ব বসন্তপুর গ্রামের জাহেদ আলী ও তার ভায়রা নোয়াহাটা গ্রামের এমাদ মিয়া এখন শিল্পীদের পৈত্রিক বাড়িটি দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এরা সুদখোর ভূমিদস্যু। এদের ফাঁদে পড়ে অনেক হিন্দু পরিবার এলাকাছাড়া ও দেশছাড়া হয়েছে। এক পর্যায়ে শিল্পী বণিকের ছোটভাই স্বর্ণ ব্যবসায়ী উত্তম বণিককে (৪৬) জাহেদের স্ত্রী সোনিয়া ভাই বানানোর অজুহাতে তাদের বাড়িতে নিয়ে উত্তম বণিকের ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে রুদ্রমোহন বণিক উৎসকে অপহরণ ও গুম করার হুমকি দিয়ে একটি দলিলে অস্ত্রের মুখে স্বাক্ষর আদায় করে।
গত ৯ এপ্রিল বেলা ১২টায় জাহেদ আলী (৪০), তার স্ত্রী সোনিয়া (৩২), এমাদ মিয়া (৪২) ও তার স্ত্রী তানিয়ার (৩৪) নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শিল্পী বণিকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেয়, শ্লীলতাহানি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বসতঘরের সামনে ও পেছনের গ্রীলে তালা ঝুলিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরদিন গিয়ে এমাদ মিয়া বিদ্যুৎ লাইন এবং পানির লাইনও বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মিজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ গিয়ে গ্রীলের তালা ভেঙে বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের সংযোগ দিয়ে পরিবারটিকে উদ্ধার করেন। পরে শিল্পী বণিক বাজিতপুর থানায় ডায়রি করতে গেলে তাকে থানার গেটে দুর্বৃত্তরা মারধর করে দেশছাড়া করার হুমকি দেয়। সেখান থেকে শিল্পী বণিক কিশোরগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করেন।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাজিতপুরের সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনার তদন্ত করে ২২ মের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ১৫ জুলাই বিকেল ৫টায় জাহেদ আলী, এমাদ ও সোনিয়াসহ অজ্ঞাত আরো ৭-৮ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিল্পীদের বসতঘরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাংচুর করে, শিল্পী বণিককে শ্লীলতাহানি করে। ছোটভাই উত্তম বণিককেও মারধর করে। উত্তমের ছেলে উৎস ও তার মা ডলি বণিক এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এসময় শিল্পী বণিক সাবেক মেয়র মিজবাহ উদ্দিনকে মোবাইলে জানানোর পর তিনি লোকজন পাঠালে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। তবে যাওয়ার সময় শিল্পী বণিকের পত্রিকা কার্যালয় ভাংচুর করে এবং ল্যাপটপ, একটি স্বর্ণের ব্রেসলেট, দুটি স্বর্ণের আংটি, অফিসে রাখা ২২ হাজার টাকা ও তিনটি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ১৬ জুলাই জাহেদ, এমাদ ও সোনিয়াসহ অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করে শিল্পী বণিক বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় মামলা করেছেন।
আসামিরা আদালত থেকে জামিনে গিয়ে মোবাইলে আবারো হুমকি দিচ্ছে বলে শিল্পী বণিক জানিয়েছেন। অবশ্য প্রতিপক্ষ তাদেরকে বাজিতপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন (মাস্টার) ও দীঘিরপাড় ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান আমিন মোহাম্মদ ফারুকের নিকট আত্মীয় বলে দাবি করে বলেও সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিল্পী বণিকের ভাই উত্তম বণিকের ছেলে উৎসও উপস্থিত ছিল।
অবশ্য এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রতিপক্ষের জাহেদ আলীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।