আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিশু যৌন হয়রানীর দায়ে অভিযুক্ত একেএম মাজাহারুল আনোয়ার ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অপর স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা নুসরাত জাহান নিপার (৩৫) ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
রোববার ৩০ জুলাই রাতে আহত শিক্ষিকার স্বামী মোঃ আঃ সালাম বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৩৪ তাং-৩০/০৭/১৭ইং)।
জানা গেছে, গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস ২৬ জুলাই বিকেলে কালীপুর মধ্যমতরফ এলাকার আব্দুল সালাম ও তার স্ত্রী গৌরীপুর চকপাড়া হেলাল উদ্দিন পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নুসরাত জাহান নিপার ওপর হামলা চালায়। এসময় ফেরদৌস লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে সালাম ও তার স্ত্রী নিপাকে গুরুতর আহত করে। এতে নিপার ডান হাতের মধ্যমা আঙ্গুল ভেঙ্গে যায়। আহত নিপাকে ওই দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আব্দুস সালাম বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে গৌরীপুর পৌর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্নে টিনের চালা নির্মাণ করে আমার জমি দখলের চেষ্টা চালায় ফেরদৌস মাস্টার। এসময় বাধা দিলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে লোহার শাবল দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়।
এ ব্যাপারে ফেরদৌস মাস্টার মুঠোফোনে বলেন, আব্দুস সালামের জমি দখলের চেষ্টা তিনি করেননি। ঘটনার দিন তিনি স্কুলের জমিতেই অভিভাবক ছাউনী নির্মাণ করছিলেন। তিনি বলেন, নিপার ওপর আমি কোন হামলা করিনি, বাকবিতণ্ডার সময় হয়ত সে অন্য কোনোভাবে আঘাত পেয়েছে।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ দেলোয়ার আহাম্মদ বলেন, ফেরদৌস মাস্টারকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে স্কুলের অভিভাবকরা জানান, ফেরদৌস মাস্টার ও তার স্ত্রী একই স্কুলের সহকারি শিক্ষক রোজি সুলতানা ছুটি নিয়ে কর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, গৌরীপুরে শিশু যৌন হয়রানীর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় দুটি পৃথক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পত্রপত্রিকায় বহুল আলোচিত-সমালোচিত শিক্ষক এই ফেরদৌস। ৫ মার্চ ময়মনসিংহ শহরে একটি হোটেল থেকে সন্দেহজনক অবস্থায় ১৩/১৪ বছরের জনৈক শিশু কন্যাকে নিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে উত্তম মধ্যমের শিকার হয় ফেরদৌস মাস্টার। এ ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নির্দেশে ইতিমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ফেরদৌস মাস্টার গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের ভূটিয়ারকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানী করেছিল। এ অভিযোগে তাকে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় মামলায় বেতন স্কেলে অবনতিকরণ দণ্ড প্রদান করে রামগোপালপুর ইউনিয়নের ধূরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় (স্মারক নং-জে প্রা শি অ/ময়মন/বিভা-০৮/গৌরী ২০১১/১৫০(৬) তারিখ ১৯/৯/১২ইং)। এছাড়া অপর একটি যৌন হয়রানীর অভিযোগে বিভাগীয় মামলায় তাকে তিরস্কার লঘুদণ্ড প্রদান করা হয় (স্মারক নং- জে প্রা শি অ/ময়মন/বিভা-২০১০/১৩৩৬/৪ তারিখ ১৯/৪/১১ইং)।
এ ব্যাপারে পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এসএমসি’র সভাপতি ম, নুরুল ইসলাম জানান, বিতর্কিত ফেরদৌস মাস্টার প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের ফলে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ দিনের সুনাম ও ঐতিহ্য ক্ষুন্ন হয়েছে। এব্যাপারে স্কুলের আতংকিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ ওই শিক্ষকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি।
সূত্র : শিশু ও শিক্ষিকার ওপর হামলার ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা [আমাদের সময়, ৩১ জুলাই ২০১৭]