কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা ।।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বহুল আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন কর্তৃক অবরুদ্ধ গচিহাটা পল্লী একাডেমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালা ভেঙে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য উম্মুক্ত করে দিলো প্রশাসন। সোমবার ৩১ জুলাই সকাল ১১টায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশ প্রশানের সহযোগিতায় স্কুলের তালা ভেঙ্গে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
জানা যায়, গত ২২ মে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন কাজে অবহেলা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগসহ ১৭টি কারণ দেখিয়ে স্কুলের চারজন শিক্ষককে বহিস্কার করে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং শিক্ষকদেরকে স্কুলে আসতে নিষেধ করেন। গচিহাটা পল্লী একাডেমী একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাদের সরকারি বেতন নিয়মিত হয়।
এর আগে তারা বকেয়া বেতন হিসাবে ৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা প্রাপ্য হন। ওই টাকার কথা জেনে সভাপতি চার শিক্ষককে ডেকে এনে সমুদয় টাকা যৌথ হিসাবে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। বাধ্য হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি সোনালী ব্যাংক কটিয়াদী শাখা থেকে টাকা তুলে তারা একই দিন ন্যাশনাল ব্যাংক গচিহাটা শাখায় যৌথ হিসাবে জমা দেন। হিসাবটি প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়।
টাকা জমা দেয়ার পর সভাপতির চাপে প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার কয়েকটি চেকে ওই পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে সভাপতিকে দেন। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সভাপতি আবার চার শিক্ষককে ডেকে তাদের বেতন যৌথ হিসেবে জমা দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু এবার চার শিক্ষকের কেউ সভাপতির সিদ্ধান্ত মতো টাকা জমা দেননি। রমজান মাসের বন্ধের সরকারি তারিখ ছিল ২৭ মে থেকে ২৯ জুলাই। ওই ঘটনার সূত্র ধরে সভাপতির নির্দেশে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয় ছয়দিন আগে ২২ মে। ১ জুলাই থেকে ফের স্কুল খোলা হয়। বন্ধের দিন জানিয়ে দেয়া হয় চারজনের মধ্যে শিক্ষিকা সাবিনা আক্তার ছাড়া তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এরপর থেকে তারা যেন স্কুলে না আসে সে নির্দেশনাও দিয়ে দেয়া হয়। কিছুদিন আগে ব্যবস্থাপনা কমিটি দ্বারা তিন শিক্ষককে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়া হয়। বহিষ্কারের তারিখ উল্লেখ করা হয় ১৬ জুলাই। স্বাক্ষর করেন সভাপতি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ২২ মে থেকে বিদ্যালয়টির অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। শিক্ষকরা স্কুলে যেতে না পারায় ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া বন্ধ ছিল। অভিভাবকরা ছিল উদ্বিগ্ন। তালা ভেঙে স্কুলটি খুলে দেয়ায় ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার দ্বার উম্মুক্ত হলো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার বেগম বলেন, প্রশাসন বিদ্যালয়ের তালা ভেঙ্গে আমাদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও আমরা আতংকিত। সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামসুদ্দিন মুন্না বলেন, দীর্ঘদিন স্কুলটি তালাবদ্ধ থাকায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আজ (সোমবার) জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পুলিশের উপস্থিতিতে তালা ভেঙ্গে স্কুলটি খুলে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব:) আখতারুজ্জামানকে চারজন শিক্ষক বহিস্কার এবং বিদ্যালয়ে তালা ঝুলানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে বা কারা তালা খুলে দিয়ে শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়েছে তা আমার জানা নাই।