আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
কাতালান জায়ান্ট বার্সেলোনায় খেলে গেছেন অনেক ব্রাজিলীয় সুপারস্টার। যে কারণে ব্রাজিলের ফুটবলের সাথে বার্সেলোনার অন্যরকম এক সম্পর্ক আছে। রোমারিও, রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনহোদের দলে সর্বশেষ সংযুক্তি ছিলেন নেইমার। সাম্বার ছন্দ বারবার মুগ্ধ করেছে কাতালান দর্শকদের। এই মুগ্ধতার মাঝেও রয়েছে একটা কালো দিক।
বার্সেলোনায় খুব বেশি দিন টিকতে পারেন না ব্রাজিল ফুটবলের বরপুত্ররা। রোমারিও, রিভালদো, রোনালদিনহো সবাইকেই ক্লাব ছাড়তে হয়েছিল কোচের সাথে ঝামেলার জন্য। ঠিক এখানেই ব্যতিক্রম রোনালদো ‘দ্য ফেনোমেনন’ ও নেইমার। ক্লাব তাদের তাড়ায়নি। নিজেরাই ক্লাব ছেড়েছেন। ২০ বছর আগে চুক্তি সংক্রান্ত ঝামেলার জন্য ইন্টারে গিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ‘নাম্বার নাইন’।
আর নেইমার ক্লাব ছেড়েছেন মেসির ছায়া থেকে বের হওয়ার জন্য।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে ‘হট টপিক’ ছিল নেইমারের দলবদল। তবে ব্রাজিলিয়ান তারকার দলবদল মোটেও মসৃণ হয়নি। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর শুরু হয়েছিল নতুন নাটক। নেইমারের আইনজীবীরা বাই আউট ক্লজের অর্থ দিতে গেলে তা ফিরিয়ে দেয় লা লিগা কর্তৃপক্ষ। লা লিগা কর্তৃপক্ষের মতে, নেইমারকে কিনতে গিয়ে উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ‘ফেয়ার প্লে’র (এফএফপি) নিয়ম ভেঙেছে পিএসজি। ফরাসি ক্লাবটি ‘ফিন্যান্সিয়াল ডোপিং’ করছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছিলেন লা লিগা সভাপতি তেবাস। এমন বিপদের সময় ব্রাজিলিয়ান তারকার হয়ে ব্যাট ধরে ফরাসি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। শেষ পর্যন্ত নেইমারের আইনজীবীর কাছ থেকে বাই আউট ক্লজের অর্থ গ্রহণ করে লা লিগা কর্তৃপক্ষ। তারপরই পিএসজির হয়ে ৫ বছরের চুক্তিপত্রে সই করেন নেইমার।
২০ বছর আগে ঠিক এইরকমই হয়েছিল রোনালদোর সাথে। তখনকার বার্সা প্রেসিডেন্ট নুনেজ বলেছিলেন, ‘রোনালদো সারাজীবন বার্সেলোনায় খেলবে। ‘কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ক্লাব ছাড়েন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি। তার অভিযোগ ছিল বার্সা কর্মকর্মকর্তারা চুক্তি নিয়ে কথার বরখেলাপ করেছেন। তাই
এক বছরেই শেষ হয় রোনালদো-বার্সার সম্পর্ক।
আরেকটি ব্যাপারে রোনালদোর সাথে নেইমারের অদ্ভুত মিল আছে। ‘দ্য ফেনোমেনন’ যখন ইন্টার মিলান থেকে রিয়ালে সই করার পর প্রথম দিন মাদ্রিদে আসেন সেদিন প্রায় ১০০০০ জার্সি বিক্রি হয়েছিল। ‘ঘরের ছেলে’ রাউলকে জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
শুক্রবার নেইমারের হাতে ১০ নম্বর জার্সি তুলে দেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট আল খেলাইফি। এরপরই প্যারিসে ব্রাজিলিয়ান তারকার জার্সি কেনার হিড়িক লেগে যায়। ইতিমধ্যেই ১০০০০-এর ওপর জার্সি বিক্রি হয়ে গেছে নেইমারের।
নেইমার চলে যাওয়ায় টেলিভিশন স্বত্ত থেকে টাকা কমে আসতে চলেছে লা লিগায়। সেই জন্য নেইমার যাতে না যান সেই জন্য কম চেষ্টা করেননি স্প্যানিশ ফুটবল কর্মকর্তারা। তাই নেইমারকে যতটা সম্ভব বিভ্রান্ত করে মনসংযোগ নষ্ট করার চেষ্টাই করছেন তারা। তবে এখন আর কিছু করার নেই। কারণ পেশাদার ফুটবলাররা এই ধরনের ঘটনায় অভ্যস্থ থাকেন।
অনেক সময় বড় ফুটবলারের সাথে তার ভক্তরাও দলবদল করেন। মানসিক ভাবে চলে যান প্রিয় খেলোয়াড়ের সাথেই। নেইমারের হাত ধরে পিএসজির সাপোর্টার যে বাড়তে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নেইমার চলে যাওয়ায় বার্সা ভক্তদেরও অনেকে ক্ষুব্ধ। কিন্তু কথাতেই আছে, ‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়।’ ব্রাজিল-বার্সা সেই সম্পর্কেরই আবার পুনরাবৃত্তি হলো নেইমারের হাত ধরে। এখন ইতিহাস হয়তো অপেক্ষা করে থাকবে নেইমারের পরবর্তী কোনো মহাতারকার জন্য।
সূত্র : কেন বার্সেলোনার সঙ্গে ব্রাজিল ফুটবলারদের সম্পর্ক মধুর হয় না? [কালের কণ্ঠ অনলাইন, ৫ আগস্ট ২০১৭]