আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট চুরি ও ছিনতাই যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অবৈধভাবে আমদানিও অব্যাহত রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালে তিন কোটির বেশি মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি হয়েছে এবং এর প্রায় এক-চতুর্থাংশ এসেছে চোরাই পথে। এর ফলে সরকার ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া বাজারে নকল ও নিম্নমানের সেটের ছড়াছড়ি এবং জঙ্গি তৎপরতাসহ বিভিন্ন অপরাধ ও অসামাজিক কাজে মোবাইল ফোনের ব্যবহার চলছেই। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসি উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতিতে লাইসেন্স দিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্ট্রার (এনইআইআর) স্থাপন ও পরিচালনা বা মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধন ব্যবস্থা চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিটিআরসি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও), আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, কাস্টম ও এনবিআরের সাথে সমন্বয় করে এবং এনইআইআরের নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। সম্প্রতি বিটিআরসির সভায় এ বিষয়ক একটি প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বিটিআরসি সচিব সরওয়ার আলম এই নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে নীতিমালা প্রস্তুতসহ অন্যান্য কাজ চলছে।
এর আগে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইল হ্যান্ডসেটের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) ডাটাবেইস প্রস্তুত এবং সংরক্ষণের জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই নির্দেশনার এক দিন পরই ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দু-এক মাসের মধ্যেই মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর নিবন্ধনের কাজ শুরু হবে এবং এসব নম্বর সংরক্ষণ করা হবে।
নিবন্ধিত এসব নম্বরের হ্যান্ডসেট ছাড়া দেশে অন্য কোনো বা ভুয়া আইএমইআই নম্বরের হ্যান্ডসেট ব্যবহার করা যাবে না।’
এ ছাড়া গত বছরের আগস্টে প্রকাশিত জাতীয় টেলিযোগাযোগ নীতিমালার খসড়ায় এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি, চুরি ও অন্যান্য বিষয় যেমন মোবাইল হ্যান্ডসেটের পুনঃপ্রোগ্রামিং রোধে মোবাইল ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামের একটি জাতীয় নিবন্ধন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।
এর আগে বিটিআরসি নকল ও আইএমইআই নম্বরবিহীন মোবাইল ফোনসেট ব্যবহার রোধে ২০১২ সালের মার্চে একটি উদ্যোগ নেয়। ওই সময় ছয় মাসের মধ্যে নকল সেটের আইএমইআই নম্বর চিহ্নিত করার জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। সে সময় ৫০ টাকার বিনিময়ে নকল সেটে সঠিক আইএমইআই নম্বর দেয়ার একটি পরিকল্পনাও নিয়েছিল বিটিআরসি। তাও বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রসঙ্গত, আইএমইআই নম্বর হলো ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা, যা বৈধ মোবাইল ফোনসেটে থাকে। একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#০৬# পরপর চাপলে ওই ফোনের বিশেষ এই শনাক্তকরণ নম্বর পর্দায় ভেসে ওঠে, যা নকল হ্যান্ডসেটে থাকে না।
সিদ্ধান্তপত্রে যা বলা হয়েছে : বিটিআরসির সর্বশেষ সিদ্ধান্তপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে বছরে গড়ে আনুমানিক ১৫ হাজার কোটির বেশি টাকার মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি করা হয়। অবৈধভাবে এসব সেট আমদানিতে সরকার বছরে আনুমানিক ৮০০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো নানাবিধ আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ যেমন— জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হচ্ছে এবং সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বেগ পেতে হচ্ছে।
এনইআইআরের সুবিধা সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশে অবৈধভাবে মোবাইল হ্যান্ডসেটের অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। মোবাইল হ্যান্ডসেট চুরি রোধ করা যাবে। চুরি হওয়া সেট টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি অপ্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত হবে এবং তা পুনরুদ্ধার সহজতর হবে। চুরি যাওয়া সেট আলাদাভাবে ডাটাবেইসে সংরক্ষিত থাকবে এবং অপারেটরদের ইআইআর (ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) ব্যবহার করে অ্যাকসেস কন্ট্রোল ব্যবস্থার মাধ্যমে চুরি হওয়া সেট ব্যবহার ঠেকানো যাবে।
সিদ্ধান্তপত্রে উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, এতে সংশ্লিষ্ট খাতে বিটিআরসির অর্থ বরাদ্দ ও অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন হবে না।
সূত্র : মোবাইল হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত [কালের কণ্ঠ, ৫ আগস্ট ২০১৭]