আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের রাজাকার হাফিজ উদ্দিনকে (৬৭) গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব-১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল ইটনা উপজেলার বাদলা ইউনিয়নের বর্শিকুড়া দরগাহাটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে শনিবার ১২ আগস্ট দুপুরে তাকে গ্রেফতার করে। র্যাব-১৪, সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসান মোস্তফা স্বপন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার হাফিজ উদ্দিনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতার হওয়া হাফিজ উদ্দিন করিমগঞ্জ উপজেলার খুদিরজঙ্গল গ্রামের মৃত ইসমত আলীর ছেলে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। ২০১৬ সালের ৩ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাজাকার হাফিজ উদ্দিন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, তার সহোদর অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ ও রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান এই চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আসামি আজহারুল ইসলামকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। দণ্ডিতদের মধ্যে অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান পলাতক অবস্থায় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ এলাকার ভাড়া বাসায় বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত অপর আসামি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ ও আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত আজহারুল ইসলাম এখনো পলাতক রয়েছেন।
র্যাব ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, রাজাকার হাফিজ উদ্দিন ইটনা উপজেলার বাদলা ইউনিয়নের বর্শিকুড়া দরগাহাটি গ্রামে তার মেয়ের জামাই কামরুলের বাড়িতে অবস্থান করছেন, এই খবরের ভিত্তিতে শনিবার সকালে র্যাব ও পুলিশ গ্রামটিতে পৃথক অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশ ও র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে হাফিজ উদ্দিন জামাই কামরুলের প্রতিবেশী তালেব আলীর ঘরের একটি মাচায় অবস্থান নেয়। অভিযানের এক পর্যায়ে র্যাব সদস্যরা সেখান থেকে হাফিজ উদ্দিনকে আটক করেন।
মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হাফিজ উদ্দিনকে আটক করায় যুদ্ধাপরাধ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি রেজাউল হাবিব রেজাসহ কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গাজী আব্দুল মান্নানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। এই মামলার পাঁচ আসামি হচ্ছেন, করিমগঞ্জের দুই সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং করিমগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। পাঁচজনের বিরুদ্ধেই ট্রাইব্যুনাল-১ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ গ্রেফতার হন এবং বাকি চার আসামি পলাতক থাকেন। পরে ২০১৬ সালের ৩ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে চার রাজাকার সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ, তার সহোদর অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ, রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান ও রাজাকার হাফিজ উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আজহারুল ইসলামকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়।
সূত্র : যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার [কিশোরগঞ্জ নিউজ, ১২ আগস্ট ২০১৭]