রাগের মাথায় তালাকের আইনগত বৈধতা আছে কি?


জামিউল হক ফয়সাল ।।

ফিরোজা বেগম (ছদ্মনাম)। আমার কাছে আইনি পরামর্শ নিতে আসেন। তিনি জানান, বিগত সপ্তাহে তাদের (স্বামী-স্ত্রীর) মধ্যে সাংসারিক বিষয় নিয়ে কলহ সৃষ্টি হলে এক পর্যায়ে তার স্বামী তাকে “তালাক” দিলাম বলে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেন। তখন তিনি বাবার বাসায় চলে যান। পরের দিন তাদের মধ্যে রাগ কমে আসলে তার স্বামী উক্ত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তাকে আবার বাসায় নিতে আসেন। তারা আবার একসাথে বসবাস শুরু করেন। সমস্যা হলো, ওই ঝগড়ার সময় তার কিছু প্রতিবেশী উপস্থিত ছিলেন। তারা অন্যদের কাছে কানাঘুষা করতে থাকেন এই বলে যে, তালাক দেয়া স্ত্রীকে নিয়ে আবার একসাথে বসবাস করছেন। তাদের সম্পর্ক এখন অবৈধ ও ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। সমাজের এরূপ কানাঘুষায় তাদের স্বাভাবিক জীবন অস্থিরতায় কাটছে। এই বিষয়ে আইনী পরামর্শ/ প্রতিকার কি?

এ বিষয়ে জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে তালাক-এর বিষয়ে আইন কি বলে?
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৭ ধারা অনুযায়ী- তালাক শব্দ উচ্চারণ করার সাথে সাথেই তালাক কার্যকর হইবে না। এই আইন অনুযায়ী যে কোনো প্রকারের তালাক কার্যকর করতে হলে কমপক্ষে ৯০ দিন অতিবাহিত হইতে হইবে। এই ৯০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/ ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে লিখিতভাবে তালাকের বিষয়ে জানাতে হবে এবং এই নোটিশের কপি স্ত্রী/ স্বামীকেও দিতে হবে। এই উদ্দত কালের (৯০ দিন) মধ্যে যদি স্বামী-স্ত্রীর পুনঃমিলন হয় তাহলে তালাক-এর কার্যকারিতা আপনা-আপনিই বাতিল হয়ে যাবে। এর জন্য তাদের পুনঃবিবাহ, হিল্লা বিয়ে বা অন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন পড়বে না।

এ সকল বিষয় নিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিককে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে নারী সমাজকে তাদের অধিকার বিসয়ে সচেতন হতে হবে। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, এক শ্রেণীর ফতোয়াবাজদের দ্বারা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে থাকে।

লেখক : মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট।

Similar Posts

error: Content is protected !!