আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
সকালে খালি পেটে বের হতে নেই। কারণ নাশতা না করলে শরীরের নানা সমস্যা দেখা দেয়। হ্যাঁ, এমন কথা বড়দের মুখে প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু এ কথা কি সত্য? প্রযোজ্য সবার জন্য? চলুন জানা যাক এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন…।
ডায়েবেটিস রোগীরা কী নাশতা করবেন?
‘যে সকালে নাশতা করে, সে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে’। অবাক হচ্ছেন? এমনটাই কিন্তু জানাচ্ছেন ব্রিটিশ বায়োকেমিস্ট টেরেন্স কেলি। তাঁর মতে, সকালে নাশতা খাওয়ার পরই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, তাই নাশতা না করাই ভালো। বলা বাহুল্য, কেলি একজন ডায়েবেটিস রোগী। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন যাঁরা ডায়াবেটিক বা যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের সকালে নাশতা না করা ভালো।
স্বাস্থ্যকর নাশতা কোনগুলো?
সকালের নাশতায় শর্করা, আঁশ, সামান্য প্রোটিন, ফ্যাট এবং অল্প ফল থাকলে সবচেয়ে ভালো। অর্থাৎ মানুষের একদিনে যা ক্যালোরির প্রয়োজন তার শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ সকালের নাশতায় থাকলেই যথেষ্ট।
যাঁরা ওজন কমাতে চান
যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য জার্মানির খাদ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়োহানেস অ্যার্ডমানের পরামর্শ অনেকটা বায়োকেমিস্ট টেরেন্স কেলির মতো। অর্থাৎ তাঁর কথায়, ওজন কমাতে চাই, সকালে নাশতা না করলেও হবে। তবে দুপুরে হালকা খাবার খাওয়ার খেতেই হবে। এছাড়া ওজন কমাতে আগ্রহীদের প্রধান খাবারগুলোর মাঝখানে টুকিটাকি খাবার, বিশেষ করে ‘জাঙ্ক ফুড’ বাদ দিতে হবে।
প্ল্যানে ‘গুড়ে বালি’
ওজন কমাতে চাইলে অনেকেই সকালে নাশতা করেন না। ফলে দেখা যায় যে, তাঁদের দুপুরে প্রচণ্ড খিদে পায়। তখন তাঁরা পরিমাণে অনেক বেশি খেয়ে ফেলেন। অর্থাৎ তাঁদের স্লিম হওয়ার প্ল্যানে গুড়ে বালি।
সকালে কি মিষ্টি খান?
শরীরে শক্তি যোগায় বলে অনেকেই সকালে মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। আসলে মিষ্টি খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে ঠিকই, তবে কিন্তু তা কিছুক্ষণের জন্য। তাই শরীরে শক্তি পেতে মিষ্টির বিকল্প হিসেবে সাদা দইয়ের সাথে খনিকটা তাজা ফল খেতে পারেন। আর মিষ্টি প্রেমীরা মন খারাপ না করে বরং মিষ্টিটা সপ্তাহান্তে পরিবারের সকলের সাথে খাবেন। তাহলে দেখবেন শর্করা বা ওজন বাড়ার সমস্যায় পড়তে হবে না।
মচমচে কর্নফ্লেকস ও বিভিন্ন বিচি
স্বাস্থ্যসম্মত সকালের নাশতা হচ্ছে– দুধ বা দইয়ের সাথে মচমচে কর্নফ্লেকস, বিভিন্ন বিচি, অর্থাৎ সূর্যমুখী ফুলের বিচি, মিষ্টি কুমড়োর বিচি, কাঠ বাদাম, তিসি, তিল ও তার সঙ্গে তাজা ফল। ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশসহ এই নাশতা যেমন পেট ভরাবে, তেমনি সুস্থও রাখবে। অথচ দেখবেন ওজনটা বাড়াবে না।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিটি মানুষ যেমন আলাদা, তেমনি তাঁদের পেট বা অন্ত্রও আলাদা। অর্থাৎ একজনের শরীরের জন্য যে খাবার অত্যন্ত জরুরি, সে খাবার অন্যের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অথবা দেখা দিতে পারে মারাত্মক অ্যালার্জি। তাই মনে রাখতে হবে যে, ‘সব খাবার সবার জন্য নয়।’
যে দেশের যে নিয়ম
গরম দেশে সকালের নাশতা হয় একরকম, আবার শীতের দেশের মানুষ অন্যরকম খাবার খান। তাই খাবারের ব্যাপারে আবহাওয়া, বয়স, দেশ, পরিবেশ, স্বাস্থ্যের অবস্থা ইত্যাদিও মাথায় রাখতে হবে। তা সে সকালের নাশতা হোক বা অন্যান্য বেলার খাবার।
কফি বা চা
যদি কেউ সকালে নাশতা না করেই ভালো বোধ করেন কিংবা শুধু কফি বা চা-ই যদি তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়, তাহলে তাঁর আর জোর করে নাশতা খাওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই। জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ ইয়োহানেস অ্যার্ডমান।
বাড়ন্ত বয়সে নাশতা
বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে সকালের নাশতার বিষয়টি আলাদা। পেট একেবারে খালি রাখলে বা কিছু না খেলে স্কুলে বা লেখাপড়ায় শিশুদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। সেক্ষেত্রে শিশুদের শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সকালের নাশতা নির্বাচন করা উচিত। তবে যে শিশু স্কুলে যাওয়ার আগে দুধ খেতে চায় না, তাকে জোর না করাই ভালো।
সূত্র : সকালে নাস্তা খাওয়া কি সত্যিই জরুরি? [ডয়চে ভেলে, ২৬ আগস্ট ২০১৭]