ইরানের ঘরগুলো যেভাবে সাজানো হয়

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

ইরানের মানুষ কিভাবে থাকেন, কিভাবে ঘর সাজান– সে বিষয়ে খুব বেশি জানার সুযোগ কম। লেনা স্পেথ জার্মান হলেও, তার ‘বিহাইন্ড ক্লোজ্ড কার্টেনস’ বা ‘পর্দার আড়ালে’ বইটিতে সেই অদৃশ্য জগৎকে দৃশ্যমান করে তুলেছেন।

আরেক ইরান
লেনা স্পেথের ‘বিহাইন্ড ক্লোজ্ড কার্টেনস’, অর্থাৎ ‘পর্দার আড়ালে’ বইটির জন্য ছবি তুলেছেন হামিদ ফরহাঙ্গেন। বইটিতে যেন একটি অদৃশ্য জগৎ ধরা পড়েছে। ইরানের মানুষ কিভাবে থাকেন, কিভাবে ঘর সাজান, তা জানার জন্য লেনা একাধিকবার ইরানে গেছেন।

প্রাচ্য আর প্রতীচ্যের মিলন
বিশেষ করে ব্যক্তিগত, বেসরকারি বসতবাড়ির দিকে নজর দেওয়া হয়েছে এই বইটিতে। এসব বাড়ির ভেতরটা যত স্বতন্ত্রই হোক না কেন, তাদের ‘ইনটেরিয়র ডিজাইন’-এর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, এখানে পূর্ব আর পশ্চিমের ডিজাইনের মিলন ঘটেছে। (ছবিতে) আমির মোর্তেজা বেশারতের বাড়ির বসার ঘরের পারসিক নকশার মেঝের ওপর সাজানো স্ক্যান্ডিনেভীয় আসবাব তার প্রমাণ।

প্যারিস থেকে ইস্পাহান
বেশারতের ৪০০ বছরের পুরনো বাড়িটি ইস্পাহান শহরের কেন্দ্রে। বেশারত নিজে প্যারিসে বড় হয়েছেন। ফ্রান্সে একটি সুবিখ্যাত আর্ট স্কুলে পড়াশুনা করার পর তিনি ১২ বছর পর আবার ইরানে ফিরে আসেন। সুপ্রাচীন বাড়িটি নতুন করে সারানোর সময় নতুন আর পুরাতনের মিলন ঘটিয়েছেন বেশারত। তাই অষ্টকোণ স্কাইলাইটটিও প্রাচ্যের হামাম বা স্নানের ঘরের কথা মনে করিয়ে দেয়।

সৈকতাবাস
লেনা স্পেথের বইটিতে যে ইরানিদের বাড়ি দেখানো হয়েছে, তাঁদের সবাই সম্ভ্রান্ত নাগরিক, প্রায় সকলেরই বিদেশযাত্রার অভিজ্ঞতা আছে। বাড়ি তৈরি ও সাজানোতেও সে অভিজ্ঞতার ছাপ পড়েছে। আলী রাভানপাকের ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের বাংলোটি কাস্পিয়ান সাগরের তীরে। ভিতরের ছিমছাম, শীতল পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে রঙিন টালি ও গালিচা।

ভূমধ্যসাগরীয়
ইস্পাহানে সুফি শাহিদজাদে ফলসাফির সুপ্রাচীন বাড়িটিকে সযত্নে সারানো হয়েছে। তবে বাড়ির ভিতর ঢুকলে যেন ভূমধ্যসাগরের উপকূলে ছুটি কাটাবার কথা মনে পড়ে যায়। হবে না-ই বা কেন – বাড়ির মালকিন বহু বছর স্পেনে কাটিয়েছেন। কাজেই একদিকে যেমন ভূমধ্যসাগরের নীল, অন্যদিকে তেমন পারসিক ডিজাইনের কুলুঙ্গি বসানো দেয়াল।

বিলিয়ার্ড রুম
প্রতীচ্য এককালে প্রাচ্যেই ছিল – বিশেষ করে ঔপনিবেশিক যুগে। তেহরানের বাসিন্দা আমির হোসেইন ইয়েগানে পেশায় জহুরি ও আসবাব নির্মাতা। কখনো বিদেশে যাননি বটে, কিন্তু ইংরেজ সাহেবিয়ানায় যে বাংলো বাড়িতে বিলিয়ার্ড খেলার ঘরটি অপরিহার্য সেটা তিনি ভালোভাবেই জানেন।

ডম্বরু
পারস্যের সবচেয়ে নামকরা বাদ্যযন্ত্র তোমবাক। এটি ডম্বরুর আকারের একটি ঢোল। আমির হোসেন রাহিমি ইয়াগানে তাই দিয়ে টেবিল ও চেয়ার বানিয়েছেন। চেয়ারের পিঠটি তৈরি করা হয়েছে স্লাইডরুলের পুঁতি বসিয়ে।

মান্ধাতার আমল
কাশান শহরটি তেহরানের প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। ‘পর্দার আড়ালে’ বইটিতে কাশানের একাধিক বাড়ির ছবি পাওয়া যাবে, কেননা, এখানে সুন্দর করে সারানো ও সাজানো বহু পুরনো আমলের বাড়ি আছে। তেহরানের ব্যস্তসমস্ত মানুষেরা সপ্তাহান্তে হাঁপ ছাড়ার জন্য কাশানে আসেন। ভিদা কালান্তারি-র বাড়িটিতেও স্ক্যান্ডিনেভীয় আসবাবের সঙ্গে প্রাচ্যের পরিবেশের মিল ঘটেছে।

ঘুমন্ত রাজপুরী
এই বাড়িটিও কাশানে। বাড়ির মালকিন শাহনাজ নাদের নিজে ইনটেরিয়র ডিজাইনার। বিদেশ ভ্রমণের ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ‘ক্নল’ আসবাব কোম্পানির হয়ে কাজ করেছেন। পুরনো, ভাঙাচোরা বাড়িটি কিনতে শাহনাজের বেশি খরচ হয়নি। তার চাইতে অনেক বেশি অর্থ, সময় ও কল্পনাশক্তি তিনি ঢেলেছেন বাড়িটির মেরামত ও অলঙ্করণে।

মিউনিখ থেকে তেহরান হয়ে বার্সেলোনা
দশ বছর ওরিয়েন্টালিজম নিয়ে পড়াশুনা করেছেন লেনা স্পেথ। ফার্সি শেখা আর দেশটাকে চেনার জন্য ইরানে বহু সময় কাটিয়েছেন। আজ তিনি বার্সেলোনায় থাকেন, তবে নিয়মিতই ইরানে যান, কেননা, ইরান এক হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ‘স্বদেশ’ হয়ে উঠেছে। ‘বিহাইন্ড ক্লোজ্ড কার্টেনস’ বইটি সেই ভালোবাসার ফল ও ফসল।

সূত্র : ইরানে যেভাবে ঘর সাজানো হয় [ডয়চে ভেলে, ১৬ জুন ২০১৭]

Similar Posts

error: Content is protected !!