আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
সারোগেসি বা গর্ভভাড়ার বিষয় আজ আর নতুন নয়। কিন্তু লোকলজ্জা ঢাকতে মাতৃত্বের জন্য মহিলাদের বেছে নিতে হচ্ছে নকল পেট। সারোগেসি ও সিলিকন বেলি একই সাথে দিয়েছে মাতৃত্বের স্বাদ এবং সমাজের সংস্কারজাত কটাক্ষ থেকে মুক্তি।
মা হওয়া মুখের কথা?
মাতৃত্বের সংজ্ঞা পাল্টেছে। ১০ মাস ১০ দিনের গর্ভধারণ নয়, বরং সারোগেসি বা গর্ভভাড়ার দ্বারা সহজেই মাতৃত্বের আস্বাদ নেয়া যায় আজকাল। তবে রক্ষণশীল সমাজ ও পরিবারের কাছে সেই মাতৃত্বের স্বীকৃতি জোটাতে ভরসা এখন সিলিকন বেলি বা নকল পেট।
পেট বাণিজ্যে লক্ষ্মী
লিলুয়ার প্রস্থেটিস্ট সুমিত্রা আগরওয়াল দীর্ঘদিন নকল পেট নিয়ে কাজ করছেন। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকেও তার কাছে মানুষ আসেন সিলিকন বেলির সন্ধানে। এগুলি শরীরে লাগানোর পর নকল পেট বলে বোঝা মুশকিল হয়।
নকল পেট সঙ্গী যখন
পরিবারের কাছে সারোগেসি গোপন করতে সঙ্গী হয় নকল পেট। আবার মহিলারা সারোগেট মায়েদের সাথে একই হাসপাতালে পাশাপাশি ভর্তি হন। গর্ভধারণের ভান করতে অনেকে নিজের পেট কাটিয়ে সেলাই করিয়ে নেন।
কোমরের মাপে
মহিলাদের কোমরের সাইজ অনুযায়ী নকল পেট তৈরি করেন সুমিত্রা। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে পেটের সাথে কোমরও চওড়া দেখায়। সেভাবেই তৈরি করা হয় সিলিকন বেলি।
নকল পেটে মাতৃত্বের অনুভূতি
তিন মাসের গর্ভাবস্থার একটা নকল পেটের দাম কমবেশি ১২ হাজার টাকা। গর্ভাবস্থার মেয়াদ বাড়লে সিলিকন বেলির ওজন এবং দামও বেশি। সমাজের কটাক্ষ থেকে বাঁচতে মানুষ দাম নিয়ে ভাবেন না।
ছদ্মবেশে পেট
এতদিন সিনেমার পর্দাতেই সিলিকন বেলির ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন তা মধ্যবিত্তদেরও ঘরে এসে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টাই গোপন রাখা হয়। ছবির মতোই একজন মহিলা নিজেকে নকল পেটে ঢেকে নিতে পারেন।
স্বীকৃতির শর্টকাট
মা হওয়ার জন্য মহিলাদের বহিরঙ্গে যে পরিবর্তন ঘটে, সেটাকেই সমাজ মান্যতা দেয়। ফলে সারোগেসিতে স্বীকৃতি না পাওয়ার ভয়ে সবাই নকল পেট ব্যবহার করতে চায়। পোশাকের উপর নকল পেট লাগিয়ে এক মহিলা।
পোশাকের নীচে
বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারবেন না যে, পোশাকের নীচে কী আছে। অর্থাৎ সমাজ জানবে, এই মহিলাই গর্ভধারিণী।
নকল পেটেও স্বাচ্ছন্দ্য
অনেক কর্মরতা মহিলা প্রেগন্যান্সির জন্য কাজ ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকতে রাজি নন। তাদের পক্ষে সারোগেসি ও সিলিকন বেলি খুবই লাভজনক। সিলিকন বেলি ব্যবহার করে বাসে-ট্রেনে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করা যায়। যেটা সত্যিকার গর্ভাবস্থায় মারাত্মক হতে পারে!
বৈধ না অবৈধ?
সারোগেসি বা গর্ভভাড়ার বিষয়টি সমাজে এখনও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই নকল পেটের সাহায্যে সারোগেসি গোপনও রাখা হয়, আবার সমাজে মাতৃত্বের স্বীকৃতিও জোটে। তাই যতদিন সমাজ সারোগেসিকে বৈধতা না দেবে, ততদিন রমরমিয়ে চলবে সিলিকন পেট বাণিজ্য।
মা হওয়ার তিনটি ধাপ
গর্ভবতী মহিলাদের উদরস্ফীতিকে মাথায় রেখে তিন রকমের নকল পেট বানানো হয়েছে। এই ৩-৬-৯ মাসের নকল পেট লাগিয়ে মহিলারা পরিবার ও সমাজের কাছে গর্ভাবস্থার পরিবর্তন দেখান। সুমিত্রা জানান, পেট পরিবর্তনের জন্য অনেকেই কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও চলে যান। যাতে এই হঠাৎ পরিবর্তন সহজে ধরা না পড়ে।
নকল পেটের সন্ধানে
আধুনিক সমাজের সর্বস্তরের মহিলার ক্ষেত্রে সিলিকন পেট ভীষণই জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই নকল পেটের সন্ধানে বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের অপেক্ষা করতে দেখা যায় ডাক্তার সুমিত্রার ক্লিনিকে। এ সব ক্ষেত্রে মহিলাদের পাশে থাকেন তাদের স্বামীরা।
সূত্র : নকল পেটের রমরমা [ডয়চে ভেলে, ৩০ আগস্ট ২০১৭]