বৃহস্পতিবার নিকলী গণহত্যা দিবস

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

২১ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের নিকলীর সবচেয়ে বড় গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সংখ্যালঘু পরিবারের ৩৫ ব্যক্তিকে উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্মশ্বানখলায় হত্যা করেছিলো পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা।

এলাকাবাসী ও গণহত্যায় প্রাণ হারানোদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, বাংলা সালের ৬ আশ্বিন। উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া থেকে পাক মেজর দোররানী ও রাজাকার কমান্ডার (তৎকালীন থানার ওসি) হোসেন আলীর নির্দেশে স্থানীয় দালাল শান্তি কমিটি ও সেই সময়কার দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আলী ওরফে ট্যাকার বাপের নেতৃতে কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ ৩৯ জনকে নিরাপত্তা কার্ড দেয়ার নাম করে ২টি নৌকায় উঠায়। সিরাজ, সানাইসহ কয়েক রাজাকারের তত্ত্বাবধানে তাদেরকে নিয়ে আসা হয় রাজাকার ক্যাম্প নিকলী থানায়।

এদের মধ্যে বাদল সূত্রধর, বাদল বর্মন, সুনু বর্মন, গোপাল সূত্রধর বয়সে কিশোর হওয়ায় রাখা হয় থানা লকআপে। বাকিদের পিঠমোড়া বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে চালানো হয় নির্যাতন। ক্ষণে ক্ষণে লাঠি আর বেয়নেটের খোঁচাখুঁচি চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

পাক মেজর দোররানীর (নিকলী জিসিপি উচ্চ বিদ্যালয় পাক ঘাঁটিতে অবস্থানরত) সাথে ওয়ারলেসযোগে সিদ্ধান্ত নেয় হোসেন আলী। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ওই ৩৫ গ্রামবাসীকে থানার নিকটস্থ সোয়াইজনী নদীর পশ্চিমপাড়ের শ্মশ্মানখলা ঘাটে সাঁরিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে চালানো হয় ব্রাস ফায়ার।

রাজাকারদের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ ৩৫ জনকেই হলুই (মাছ গাঁথার বড় সুঁই) করে নিয়ে যাওয়া হয় ধুবলারচর নামক হাওরে। মৃত্যু নিশ্চিৎ করতে বর্ষার পানিতে ডুবিয়ে দেয় সবাইকে।

কামিনী বর্মন নামে একজন কাকতালীয়ভাবে বেঁচে যান। ভোর বেলায় ছেড়ে দেয় থানা লকআপের ৪ কিশোরকে। ততক্ষণে হাওরের জলে ভেসে গেছে তাদের মা-কাকীর সিঁদুর। বিধ্বস্ত কিশোরদের চোখে প্রতিশোধের আগুন। উপায়ান্তর না দেখে যোগ দেয় এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযেদ্ধাদের সাথে। রাজাকার ঘাঁটির পথ-ঘাট চেনানোসহ নানা কাজে সহযোগিতা করে দেশ স্বাধীন হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।

Similar Posts

error: Content is protected !!