কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি ।।
সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাগূজা। আর এই পূজার অন্যতম অনুষঙ্গ বাদ্য। যা পূজাকে আরো উৎসবমুখর করে তোলে। এই বাদ্যযন্ত্রের হাট বসে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পুরান বাজারে। যা ‘ঢাকের হাট’ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে।
জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতকের মাঝামাঝিতে এই হাটের প্রচলন শুরু হয়। তৎকালীন সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় আচমিতার ভোগবেতালে পুজা মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। সেই পূজা উপলক্ষে ঢাকের আমন্ত্রণ জানানো হতো বিক্রমপুরে (মুন্সিগঞ্জ) বিভিন্ন স্থানে। সেখান থেকে একে একে জড়ো হতো বাদ্যি যন্ত্রশিল্পীরা। উপজেলার বিশ্বনন্দিত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা ছড়াকার সুকুমার রায় তথা হরি কিশোর রায়ের বাড়ি মসূয়ায় বসত বাদ্যি যন্ত্রীদের প্রতিযোগিতা। পরে তা কালের আবর্তে স্থানান্তরিত হয়ে কটিয়াদী পুরান বাজারে চলে আসে।
স্থানীয়দের মতে, এটি বাংলাদেশের একমাত্র পুরাতন ঢাকের হাট। শুধু ঢাক নয়; ঢোল, সানাই, ঝল্লরী, বাঁশিসহ বড় দল বা ছোট দলে বাদ্য বাজাতে থাকেন। ঢুলিদের বাজানোর দক্ষতায় আকৃষ্ট হলে চলে দরকষাকষি। দশমী পূজা পর্যন্ত চুক্তিতে আবদ্ধ করা হয় বাদকদের। প্রতিবছর পূজার পঞ্চমী দিন সকাল থেকে শুরু হয় ঢাকের হাট। মানিকগঞ্জ, রংপুর দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, হবিগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, শেরপুর খুলনাসহ দূর-দূরান্ত থেকে বাদকরা এই হাটে এসে জড়ো হন।
নবাবগঞ্জ ঢাকা থেকে আসা আনন্দ দাস জানান, তারা গতকাল রোববার ৭ জনের একটি দল এসেছেন। গ্রাহকরা আসছেন, দরকষাকষি চলছে।
মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা খোকন দাস কটিয়াদী এসেছেন আজ সোমবার সকালে। আশা করছেন ভালো সম্মানি দিয়েই তাদেরকে নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান কেয়া জানান, ঢাকের হাটের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব আইন উদ্দিন বলেন, বহু বছরের ঐতিহ্য কটিয়াদীর এই ঢাকের হাট। হাটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।