আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
যারা ক্রনিক ব্যথায় ভোগেন, ডাক্তারদের পক্ষে তাদের সমস্যা বোঝা খুবই কঠিন। গবেষকরা এমন ব্যথা চিহ্নিত করে তার চিকিৎসা খোঁজার ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছেন। সরাসরি ব্যথার উৎস ও বিকাশ পর্যবেক্ষণ করে তারা অনেক জ্ঞান অর্জন করছেন।
শরীরে ব্যথা জীবন দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। অথচ তার উৎস অনেক সময়ে অজানা থেকে যায়, বিশেষ করে ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষ হন্যে হয়ে এক ডাক্তার ছেড়ে অন্য ডাক্তারের কাছে ছোটেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেউই সাহায্য করতে পারে না।
শরীরে চোট পেলে সতর্কবাণী হিসেবে ব্যথা অনুভব করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ক্রনিক ব্যথার ক্ষেত্রে সেই প্রয়োজন থাকে না। সেই ব্যথা শরীরকে সুরক্ষা দেয় না, বরং ক্ষতি করে। এ যেন ত্রুটিপূর্ণ অ্যালার্ম ব্যবস্থার ভুল সংকেত।
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রোহিণী কুনার এই ‘ভুল’ ব্যথার উৎস খোঁজার চেষ্টা করছেন। আমাদের মস্তিষ্কে কোনো প্রক্রিয়া কোনো ব্যথাকে স্থায়ী করে তোলে, তা অনেককাল ধরে অজানা ছিল। প্রো. কুনার বলেন, ‘‘কাঠামোগত পরিবর্তন না ক্রিয়াগত পরিবর্তন ব্যথার সাথে জড়িত, তখন সেই প্রশ্ন উঠলো। অর্থাৎ কোনো স্নায়ু বা মস্তিষ্কের কোনো কোষ সক্রিয় হয়ে উঠেছে, না ব্যথার নতুন কোনো যাত্রাপথ বা স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে নতুন কোনো স্পন্দন দেখা যাচ্ছে?’’
কোষে পরিবর্তন ও মস্তিষ্কে নতুন স্নায়ুর সংযোগ ক্রনিক ব্যথার কারণ হতে পারে। হাতেনাতে তার প্রমাণ পেতে রোহিণী কুনার ও তার টিমকে সবার আগে ব্যথার আবির্ভাব পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে। প্রফেসর রোহিণী কুনার বলেন, ‘‘আমরা এমন পদ্ধতির খোঁজ চালিয়েছি, যার সাহায্যে আমরা কোনো অক্ষত জীবের ব্যথার গতিপথ দেখতে পারি। অর্থাৎ ঠিক যেন জানালা দিয়ে মস্তিষ্কে উঁকি মেরে দেখতে পারি, কীভাবে স্নায়ুকোষগুলির মধ্যে আদানপ্রদান ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে।’’
এক মাল্টি-ফোটন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে গবেষকরা সরাসরি কোষের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন। রোহিণী কুনার ও তাঁর সহকর্মীরা বেশ কয়েক মাস ধরে ক্রনিক ব্যথায় ভোগা ইঁদুরের মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করেছেন। দেখা গেল, কাঠামোর সত্যি পরিবর্তন ঘটছে। নতুন সিন্যাপ্স তৈরি হচ্ছে, যা দুর্বল স্পন্দন পেলেও মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই অতি সংবেদনশীল স্নায়ুতন্ত্র ব্যথার বোধ দীর্ঘ সময়ের জন্য জীইয়ে রাখে। প্রো. কুনার বলেন, ‘‘যে স্পন্দন ব্যথা সৃষ্টি করে এবং যে সেটা করে না, ক্রনিক ব্যথার রোগীরা তার মধ্যে তফাত করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ফলে ত্বকে সাধারণ স্পর্শ পেলেই ব্যথা লাগতে পারে। যে কোনো স্টিমুলাসেই ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।’’
স্নায়ুর এই পরিবর্তিত ট্র্যাক কি ক্রনিক ব্যথার চিকিৎসার চাবিকাঠি হতে পারে?
‘অপ্টোজেনেটিক্স’ নামের এক নতুন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্যে গবেষকরা প্রথমবার ব্যথার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারছেন। আলোর প্রতি সংবেদনশীল প্রোটিন, যাকে পরিবর্তিত স্নায়ুর তন্তুর মধ্যে ব্যথার জন্য দায়ী বলে মনে করা হতো, সেটিকে আলো জ্বালিয়ে বা নিভিয়ে চালু বা বন্ধ করা সম্ভব। বিষয়টি আলোর সুইচের মতো।
প্রো. রোহিণী কুনার ত্রুটিপূর্ণ ব্যথার উত্থান প্রতিরোধ করতে চান। ওষুধ বিশেষজ্ঞরা ক্রনিক ব্যথার চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট ওষুধ তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। ফলে ভবিষ্যতে অনেক রোগীকে ফলহীন চিকিৎসা ও কড়া ব্যথার ওষুধের উপর নির্ভর করতে হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র : ক্রনিক ব্যথা দূর করতে আশার আলো [ডয়চে ভেলে, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭]