প্রাচীন থেকে বর্তমান : সুন্দর ঠোঁটের কাহিনী

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

আদর্শ অধর, বা সুন্দর ঠোঁট বলতে কী বোঝায়? এর কোনো ‘একটা জবাব’ দেয়া হয়ত সম্ভব নয়। কেননা যুগে যুগে এর সংজ্ঞা পরিবর্তন হয়েছে, বদলেছে সুন্দর ঠোঁটের বর্ণনা। দেখুন ছবিঘরে।

প্রাচীন মিশর
প্রাচীন মিশরে ঠোঁটের সৌন্দর্য ছিল একেবারে ভিন্ন। পিরামিডের ভেতর পাওয়া খ্রিষ্টপূর্ব ১৪ শতাব্দীর এই মূর্তি থেকে বোঝা যায় যে, তখন চোখ আর নাকের আকার ছিল বড়। তবে ঠোঁটের আকার ছিল স্বাভাবিক। অর্থাৎ ঠোঁট এমনভাবে আঁকা হতো, যাতে তার দিকে কারো চোখ না যায়।

গ্রিস
প্রাচীন গ্রিসের এই ভাস্কর্য থেকে বোঝা যায় যে তখন মেয়েদের উপরের ঠোঁট ছিল পাতলা, অথচ নীচের ঠোঁটটা ছিল বর্গাকার। এটাকেই তখন ঠোঁটের সৌন্দর্যের প্রতীক মানা হতো।

ভারত
লক্ষ্মী দেবীর এই মূর্তিতে ঠোঁট খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হলেও, প্রতিমার প্রধান আকর্ষণ কিন্তু চোখ আর নাক। মূর্তির দিকে তাকালে সবার আগে তাই নাক আর চোখের দিকেই চোখ চলে যায়।

চীন
মিং রাজবংশের নারীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়া হতো। এটা তখনকার চিত্রকলাতেও চোখে পড়ে। ঠোঁট বড় হলে মেকআপের আড়ালে ঢেকে ছোট করে ফেলা হতো। তবে তখন লাল লিপস্টিকের চলন ছিল খুব বেশি।

ইটালি
১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের এই পেইন্টিং থেকে দেখা যাচ্ছে যে, তখন মেয়েদের ঠোঁট হতো পাতলা। এতটাই পাতলা যে ঠোঁটযুগল চোখেই পড়ত না।

ইউরোপ
১৮০০ শতকে এসে পুরু ও মোটা ঠোঁটকে সুন্দর বলার চলন শুরু হলো ইউরোপে। কিন্তু এরপর আবারও যুগ পাল্টালো এবং ছোট ঠোঁটকে সুন্দর বলা হতে লাগলো। মানুষই বোধ হয় একমাত্র প্রাণী, যে ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকিয়ে ‘সম্ভাষণ’ বা চুম্বনেক তার মর্ম-সহ উপলব্ধি করতে পারে। আর সেটাই ফুঁটে উঠে ১৯১০ সালে গুস্তাভ ক্লিম্ট-এর বিখ্যাত তেলচিত্র ‘দ্য কিস’-এ। এখানে ঠোঁট দু’টি কিছুটা বিস্তৃত এঁকেছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র
১৯৫০-এর দশকে মার্কিন অভিনেত্রী গ্রেস কেলিকে সৌন্দর্যের প্রতীক মনে করা হতো। তাঁর ঠোঁট ছিল উপরে পাতলা আর নীচে ভারী।

১৯৮০
যুগ বদলানোর সাথে সাথে মুখমণ্ডলের মধ্যে মুখ্য হয়ে উঠল হাসি। অথবা উল্টোভাবে বললে ঠোঁটের কদর বেড়ে গেল। টিভিতে টুথপেস্টের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সিনেমায় অভিনেত্রীর দাঁত বের করে হাসতে দেখা যেতে লাগল।

১৯৯০
বড় হাসি, দেখতে ভালোবাসি। ১৯৯০-এর দশকে জুলিয়া রবার্টসের এই হাসি দেখে পাগল হয়নি এমন কম তরুণই আছেন। তাই জুলিয়া রবার্টসের মতো ঠোঁটের নারীদের তখন সৌন্দর্যের প্রতীক বলে মনে করা হতো।

একবিংশ শতাব্দী
এই শতাব্দীর অন্যতম রূপসী নারী বলা হয় বলিউডের ঐশ্বর্য রাই বচ্চনকে। যাঁর বিস্তৃত হাসি আর ভারী ঠোঁটের দমকে পাগল বিশ্ববাসী।

বর্তমান প্রজন্ম
কিম কার্দেশিয়ানের রূপের চর্চা বিশ্বব্যাপী। তাঁর ঠোঁটের এই ধরন এখন বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। ইন্সটাগ্রামে তাঁর ভক্তের সংখ্যা ছ’কোটির মতো। সেখানে মূলত সেলফি পোস্ট করেই এত ভক্তকে সন্তুষ্ট রেখেছেন তিনি। কিশোরী থেকে তরুণী – সকলেই এখন মেকআপ বা প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নিজেদের ঠোঁটকে ঠিক এমনটি করে নিতে ব্যস্ত।

সূত্র : প্রাচীন থেকে বর্তমান: সুন্দর ঠোঁটের কাহিনি  [ডয়চে ভেলে, ১০ আগস্ট ২০১৬]

Similar Posts

error: Content is protected !!