এম হাবিবুর রহমান ।।
নিকলী সদর ইউনিয়নের দোয়ারহাটি গ্রামের মৃত আনফর আলীর ছেলে শাজাহান (৪৫) কালো মাটি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। নিকলী উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস থেকে প্রশিণ নিয়ে ১২ বছর আগে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কালো মাটির ব্যবসা শুরু করেন। নিকলী-করগাঁও রোডের উত্তর পাশে রোদা নদীর পাড়ে ১ শতাংশ জমির কালো মাটি উত্তোলনের জন্য জমির মালিককে দিতে হয় প্রতিবছর ১০ হাজার টাকা। শাজাহান দিনমজুর দিয়ে কালো মাটি উত্তোলন করেন। তারপর মহিলা শ্রমিক দিয়ে কালো মাটি শুকিয়ে আবার চালনা দিয়ে ভালো করে চেলে পাউডারের মতো গুড়া করে বাজারজাত করার উপযুক্ত করে তুলেন। ১ টনের ১ ট্রাক কালো মাটি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করেন।
শাজাহান বলেন, প্রতি শতাংশ জমি থেকে ৩৫ থেকে ৪০ টন কালো মাটি সরবরাহ করা যায়। ৩-৪ ফুট মাটি কাটলেই কালো মাটির সন্ধান মিলে। সেই কালো মাটি কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাকযোগে ইটভাটার মালিক ও ব্যক্তিরা নিয়ে যায়। ছোট নৌকা ভরে ১ নৌকা কালোমাটি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। সেই মাটি এলাকায় লাকড়ির বিকল্প হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চলতি বছর কালোমাটি আছে এমন জমির মালিকদের কাছ থেকে ১০০ শতাংশ জমি লিজ নিয়েছেন। যার মূল্য আনুমানিক ১০ লাধিক টাকা। কার্তিক মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত কালো মাটি উত্তোলন ও বিক্রি করা হয়। কথা হয় শাজাহানের সাথে। তিনি বলেন, আমি ১২ বছর ধরে কালো মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে যে টাকা আয় করি তা দিয়ে আমার বড় মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিনকে বিয়ে দেই এবং হাওরে ৭৫ শতাংশ বোরো জমি কিনি। আমার ১ ছেলে জুয়েল আহাম্মেদকে বিকেএসপিতে লেখাপড়া করাচ্ছি। সে সাঁতারে ভালো রেজাল্ট করেছে। জুয়েল বর্তমানে নবম শ্রেণীর ছাত্র। আমার ছোট ছেলে নিকলী গোড়াচাঁদ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। আমি কালো মাটি বিক্রি করার আগে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতাম। খুব কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। শাজাহান হাসতে হাসতে বলেন, ‘সাংবাদিক সাব আমি আমার গ্রামের নিকলী সদর রজনিগন্ধা যুব উন্নয়ন সমিতির একজন সদস্য হিসাবে যুব উন্নয়নের প্রশিণ করি। তৎকালীন যুব উন্নয়ন অফিসার মো: বদরুল আলম স্যারের সহযোগিতায় ২০ হাজার টাকা ঋণ পাই আর আমি সেই ঋণের টাকা দিয়ে কালোমাটির ব্যবসা শুরু করি। এলাকায় ও বাহিরে এই মাটির চাহিদা থাকায় প্রতিবছর বহু টাকা আয় করি এবং আমার এই কালো মাটি উত্তোলন কাজে ১০টি পরিবার কাজ করে সংসার চালাচ্ছে।’