আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
নানা শ্রুতিকথা, বই আর সিনেমার সূত্র ধরে ১৩ তারিখ ও শুক্রবারকে অনেকে অশুভ মনে করেন। এমনকি যারা কুসংস্কার বিশ্বাস করেন না তারাও….
যিশুর শেষ ভোজ
ছবিটি প্রখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ‘দ্য লাস্ট সাপার’। ১৯ শতকে এ ধারণা বিস্তার লাভ করে যে, যিশুখ্রিস্টের শেষভোজে তাঁর বিশ্বাসঘাতক শিষ্য জুডাস ১৩তম ব্যক্তি হিসেবে সেখানে হাজির হয়। ক্যাথলিকরা আরো মনে করেন, যিশুর প্রয়াণ হয়েছিল শুক্রবারে।
নরওয়ে পুরাণের লোকি
ভাইকিং মিথে দুষ্কর্মের প্রতীক দেবতা ‘লোকি’কে ১৩ সংখ্যার সমার্থক ধরা হয়। ভালহালায় ১২ জন দেবতার এক পুনর্মিলনী ভোজে বাগড়া দেয় লোকি এবং আনন্দ-বেদনার দেবতা বালডারের মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করা হয়। এ সংক্রান্ত লেখা ‘প্রোস এডা’ লেখা হয় ১৩ শতকের শুরুর দিকে। ছবিটি ১৭৬০ সালে জ্যাকব সিগুর্ডসনের আঁকা।
‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’
ড্যান ব্রাউনের ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’ উপন্যাসে দেখানো হয়, অক্টোবর ১৩ শুক্রবার ১৩০৭ সালের ঘটনাবলী কুসংস্কারের জন্ম দিয়েছে। ওই দিন ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ চতুর্থ নাইট টেম্পলারের গ্র্যান্ড মাস্টারকে পবিত্রতা লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেফতার করা হয়। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ একে পরবর্তী সময়ের বানানো তথ্য বলে মনে করেন।
ক্যানটারবুরির গল্প
১৪ শতকের ইংরেজ কবি জিওফ্রে চসার তাঁর ‘ক্যানটারবুরির গল্প’ নামের বিখ্যাত সংকলনে শুক্রবারকে ‘অশুভ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি লেখেন, ‘‘এবং শুক্রবারেই যত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে।’’ ১৭ শতকের দিকে অনেক লেখকই শুক্রবারে কোনো নতুন প্রকল্প শুরু না করার পরামর্শ দিতেন। সেসময় যুক্তরাজ্যে ফাঁসিও দেয়া হতো শুক্রবারে।
অ্যাপোলো থার্টিন
অশুভ তেরো’র আরেকটি ঘটনা অ্যাপোলো তেরো’র মহাকাশ ভ্রমণ। (ছবিতে ১৯৯৫ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রে টম হ্যাংকসকে দেখা যাচ্ছে)। ১৯৭০ সালের এপ্রিল ১৩, অ্যাপোলো তেরোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ হয়। অবশ্য পরে মহাকাশজানটি সফলভাবে পৃথিবীতে অবতরণ করে। ১৩ সংখ্যা নিয়ে ভীতিকে জার্মান ভাষায় বলা হয় ‘ট্রিসকাইডেকাফোবিয়া’
১৩ তলার রহস্য
যুক্তরাষ্ট্রে বহুতল ভবনে ১৩কে বাদ দিতে ১৩ তলাকে ১৪ তলা হিসেবে দেখানো হয়। ভবনে ইংরেজী ১৩তম সংখ্যা ‘M’ বাদ দেয়া হয়। অনেকে ভাবেন, এই বাদ দেয়া লেভেল কোনো গোপন উদ্দ্যেশে ব্যবহৃত হয়। ১৯৭৫ সালে নির্মিত সুপারম্যান চলচ্চিত্রে দেখানো হয়, ভিনগ্রহের অধিবাসীরা ১৩ তলার গোপন কক্ষ দিয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে।
সুরকার আর্নল্ড শ্যোয়েনবার্গ
১২ স্বরের উদ্ভাবক বিখ্যাত সুরকার আর্নল্ড শ্যোয়েনবার্গের ১৩ সংখ্যা নিয়ে ছিল সাংঘাতিক ভীতি। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন, ১৩-র গুণিতক বছরেই মৃত্যু হবে তাঁর। এক জ্যোতিষী তাঁকে বলেছিলেন, ৭৬ বছর বয়স (৭+৬=১৩) তাঁর জন্য বিপজ্জনক। এ কথা শুনে তিনি এতটাই মনমরা হয়ে পড়েন যে, এ দুর্ভাবনার জেরেই ১৯৫১ সালের জুলাইয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। সেদিনটা ছিল শুক্রবার ১৩।
লেখক শোলোম আলেকেম
লেখক ও নাট্যকার শোলোম তাঁর ‘ফিডলার অন দ্য রুফ’ নামের গীতিনাট্যের চরিত্র ‘টেভি দ্য ডেইরিম্যান’-এর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিনিও ১৩ সংখ্যাটিকে ভয় পেতেন। ১৩ সংখ্যাকে এড়াতে তাঁর পান্ডুলিপিতে তিনি ১২এ ব্যবহার করতেন। তাঁর মৃত্যু হয় ১৩ তারিখে, তবে দিনটি ছিল শনিবার।
সূত্র : ১৩ যেসব কারণে অশুভ [ডয়চে ভেলে, ১ নভেম্বর ২০১৭]