মানসুরা হোসাইন ।।
ঘরের কাজের জন্য প্রশিক্ষিত নারী কর্মী নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে রাজধানীতে। ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ নারী বিভিন্ন বাসায় কাজও করছেন। তাঁদের বেতন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে।
গৃহকর্মীদের আয়, ক্ষমতায়ন ও সুযোগ বৃদ্ধিবিষয়ক প্রকল্পের আওতায় এই নিয়োগ হচ্ছে। এ প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম বাংলাদেশ। কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংগঠন নারী মৈত্রী ও মাদার অ্যান্ড ফ্যামিলি কেয়ার লিমিটেড।
নারী মৈত্রী গৃহকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। মাদার অ্যান্ড ফ্যামিলি কেয়ার লিমিটেড নিয়োগের ব্যবস্থাসহ পরবর্তী সেবা দিচ্ছে। এই গৃহকর্মীদের মাসিক বেতন সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। পাশাপাশি মাদার অ্যান্ড ফ্যামিলি কেয়ার লিমিটেডকে শুরুতেই গৃহকর্মীর বেতনের ৫০ শতাংশ (এককালীন) এবং প্রতি মাসে সার্ভিস চার্জ হিসেবে গৃহকর্মীর মাসিক বেতনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ অর্থ দিতে হয়।
ফ্যামিলি কেয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গৃহকর্মী ও নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া, চুক্তি করা, স্থানীয় থানায় গৃহকর্মীর তথ্য নথিভুক্ত করা এবং চুক্তির পর থেকে পুরো দায়িত্ব আমাদের। চুক্তির পর গৃহকর্মী যদি কাজ করতে না চান বা নিয়োগকর্তার পছন্দ না হয়, তখন আবার নতুন একজনকে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আর ৫০ শতাংশ টাকা নেওয়া হয় না। কোনো গৃহকর্মী অনুপস্থিত থাকলে টেলিফোনে জানালে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’
২০১৫ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে সরাসরি গৃহকর্মীদের কাজ দেওয়া শুরু হয়েছে গত মে মাস থেকে। আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীনসহ নানা কর্মঘণ্টার জন্য গৃহকর্মী পাওয়া যাবে এই প্রক্রিয়ায়। আপাতত ধানমন্ডি, জিগাতলা ও মোহাম্মদপুরের বাসিন্দারা এ সুযোগ পাচ্ছেন। শিগগির মিরপুর, উত্তরাসহ কয়েকটি এলাকায় এ সেবা চালু করা হবে।
জিগাতলায় নারী মৈত্রী প্রকল্পের দপ্তরে গিয়ে দেখা যায়, প্রেশার কুকার, রাইস কুকারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সামনে নিয়ে বিভিন্ন বয়সী ২৫ জন নারীকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সুরাইয়া শারমীন। তিনি জানান, দেড় মাসে মোট ১২টি ক্লাস করানো হয়। এই নারীরা বর্তমানে বিভিন্ন বাসায় খণ্ডকালীন (ছুটা বুয়া) কাজ করছেন।
প্রশিক্ষণ নিতে আসা নাসিমা জানান, সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তিনটি বাসায় কাজ করেন। প্রতি কাজ ৬০০ টাকা। ঘুরে ঘুরে এই কাজ করে পান মাসে তিন হাজার টাকা। স্বামী রিকশা চালান। দুই সন্তান আছে। এখানে প্রশিক্ষণ নিলে ভালো বেতনে কাজ পাবেন বলে তাঁর আশা।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গৃহকর্মী মুক্তা আক্তার কাজ করেন মোহাম্মদপুরের শেখের টেকের এক বাসায়। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে জানান, সপ্তাহে ৩ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ তিনি। বেতন পান চার হাজার টাকা। তাঁর সন্তানের বয়স সাড়ে তিন বছর। স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন।
মুক্তা বলেন, ‘এখন ব্লেন্ডার মেশিন চালাইতে পারি বলে পেঁয়াজ-রসুন মেশিনেই বাটি। প্রেশার কুকারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারি বলে মালিক আমার ওপর ভরসা রাখেন। এক বছরের লাইগ্যা চুক্তি করছি মালিকের লগে।’
নারী মৈত্রীর প্রকল্প সমন্বয়ক ওয়াহিদা বেগম এবং প্রকল্প কর্মকর্তা লায়লা আরিফা খানম জানান, অক্সফামের সহায়তায় প্রকল্পটি চলবে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ৯০০ গৃহকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই গৃহকর্মীদের বয়স ১৮ বছর থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। যাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁদের আসা-যাওয়ার খরচ দেওয়া হচ্ছে।
অক্সফাম বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা রোখসানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, এখন অনেকে দালালের মাধ্যমে গৃহকর্মী রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হয়। অন্যদিকে গৃহকর্মীরা অধিকার-সচেতন নন এবং কাজে দক্ষ নন বলে নির্যাতনের মুখে পড়ছেন। পুরো প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্যই এ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
সূত্র : ঢাকায় মিলছে প্রশিক্ষিত গৃহকর্মী [প্রথম আলো, ৭ নভেম্বর ২০১৭]