আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির রোগে (কার্ডিওমায়োপ্যাথি) জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছিল অ্যান্থনি অ্যান্ডারসনের। ইংল্যান্ডের সুইনটন অঞ্চলের ৫৮ বছর বয়সী এ মানুষটি বেশ কিছুদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ম্যানচেস্টারের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। তাঁকে বাঁচাতে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না। অ্যান্ডারসন তাই নিজের ভাগ্য সৃষ্টিকর্তার ওপর সঁপে দিয়ে একটি সুস্থ-সবল হৃৎপিণ্ড খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। যমে-মানুষে টানাটানির এই পর্যায়ে অ্যান্ডারসন সুখবরটা পেলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা ছিল খুব স্বাভাবিকভাবেই একজন মৃত মানুষের হৃৎপিণ্ড।
চিকিৎসকেরা কিন্তু হাল ছাড়েননি। প্রযুক্তির কল্যাণে হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসায় এত দিনে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ওয়েদেনশ হাসপাতালের হার্ট সার্জনরা অ্যান্ডারসনের চিকিৎসায় এমনই এক প্রযুক্তির সাহায্য নিলেন, যার নাম ‘হার্ট ইন আ বক্স’। হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের চিকিৎসায় যুগান্তকারী এই প্রযুক্তির সাহায্যে মৃত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ডও প্রায় আট ঘণ্টা সময় সচল রাখা যায়। চিকিৎসকেরা এই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েই অ্যান্ডারসনের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে বাঁচিয়েছেন তাঁর জীবন। প্রায় ১৫ বছর ‘কার্ডিওমায়োপ্যাথি’ রোগে ভোগার পর হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করার সপ্তাহ খানেক পরই অ্যান্ডারসন এখন দিব্যি সুস্থ-সবল মানুষ।
‘হার্ট ইন আ বক্স’—প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্বের মাত্র চারটি হাসপাতালে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়। ওয়েদনশ হাসপাতাল তার মধ্যে অন্যতম। ম্যানচেস্টার ইভিনিং নিউজ জানিয়েছে, খুব কমসংখ্যক মানুষই এই যুগান্তকারী প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করাতে পেরেছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১০০ জন রোগীর মধ্যে ১৫ জনই হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করতে না পেরে মারা যান। ওয়েদনশ হাসপাতালের চিকিৎসক রাজামিয়ের ভেঙ্কটশরণ মনে করেন, এই প্রযুক্তির ব্যবহার বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়লে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনে বিপ্লব ঘটে যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে কাজ করে এই ‘হার্ট ইন আ বক্স’? প্রযুক্তিটি আলোর মুখ দেখেছে মাত্র কয়েক বছর আগে। এর ব্যবহার এখনো সীমিত। চিকিৎসকেরা প্রথমে মৃত কোনো ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড ‘ট্রান্সমিডিয়া অর্গান কেয়ার সিস্টেম’-এর মাধ্যমে সচল করেন। এ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত প্রবেশ করানো হয় হৃৎপিণ্ডের মধ্যে। এভাবে হৃৎপিণ্ড সচল হলে তা পুনরায় পরীক্ষা করা হয়, যেন হৃৎপিণ্ডের সক্রিয়তা থেমে না যায়। এরপর তা প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
এই ব্যবস্থা আরও সহজলভ্য হলে বিশ্বের কোটি কোটি হৃদ্রোগীর জন্য সুখবর বয়ে আনবে নিশ্চয়ই।
সূত্র : মৃতের হৃৎপিণ্ড দিয়ে বাঁচল জীবন! [প্রথম আলো, ১২ নভেম্বর ২০১৭]
সূত্র : মেইল অনলাইন