নুরুননাহার সাত্তার ।।
ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় আপেলের ক্ষেত জার্মানিতেই। জার্মানরা আপেল খেতে খুবই ভালোবাসে আর আপেলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন।
এক ফলের হরেক চেহারা
আপেল এমনই একটি ফল যা খেতে মজা, স্বাস্থ্যকর এবং নানাভাবে খাওয়া যায়। জার্মানিতে আপেলের ব্যবহার অনেকভাবে হয়ে থাকে। ফল হিসেবে তো খাওয়া হয়ই, এছাড়া ভাজি হিসেবে, অন্য রান্নার সঙ্গে, জেলি, সালাদ, আচার, ওয়াইন, জুস, কেক, চকলেট এবং আরো অনেক রকমভাবে!
সবচেয়ে বড় ক্ষেত জার্মানিতেই
একজন জার্মান বছরে ৩৩ কেজি আপেল খায় কোনো না কোনোভাবে। বছরে আনুমানিক ৯৪২.২০০ মিলিয়ন টন আপেল গাছ থেকে পাড়া হয়। আপেল এসেছে এশিয়া থেকে। ছয় শত বছর আগে মধ্য ইউরোপে আপেলের চাষ প্রথম শুরু হলেও, ১৯ শতক থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আপেল ফলানো হচ্ছে জার্মানিতে। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় আপেলের ক্ষেতও রয়েছে জার্মানিতেই।
হাজারো জাতের আপেল
বলা হয়, সারা বিশ্বে কুড়ি হাজার জাতের আপেল রয়েছে। তবে জার্মানিতে আনুমানিক ১,৫০০ জাতের আপেলের চাষ হলেও এখন ব্যবসায়িক দিক থেকে মাত্র ৫০ রকম জাতের আপেলই ফলানো হয়।
প্রতিদিন আপেল
প্রবাদ আছে– দিনে একটি করে আপেল খান, ডাক্তারকে দূরে রাখুন। কারণ আপেলে রয়েছে মিনারেল, আয়রন এবং প্রচুর ভিটামিন যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। যারা নিয়মিত আপেল খায় তাদের শারীরিক সমস্যাও হয় কম। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, আপেল কোলেস্টেরল কমাতে এবং ক্যানসার রোধেও সহায়তা করে।
‘পাওয়ার ব্রেকফাস্ট’
ছবিতে জার্মানির লাইপসিশ শহরের একটি স্কুলে বাচ্চাদের টিফিনের সময় আপেল খেতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আপেল ফিট রাখে, তাই আপেলকে বলা হয়, ‘পাওয়ার ব্রেকফাস্ট’। আপেল সারা বছরই পাওয়া যায়।
সবসময়ের সঙ্গী আপেল
জার্মানিতে রাস্তাঘাটে বা অফিসে প্রায়ই মানুষকে আপেল খেতে দেখা যায়। আপেল খুব সহজে যে কোনো জায়গায় খাওয়া যায় এবং বহন করা যায়। তাই অনেকেই বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় চট করে একটা আপেল ভরে নেন ব্যাগে।
ভিটামিন ‘সি’
আপেলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, যা প্রতিদিন মানুষের শরীরে প্রয়োজন। সম্ভবত পরিবেশ দূষণের কারণে আজকাল অনেক মানুষের আপেল-অ্যালার্জি দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আপেল সরাসরি না খেয়ে সেদ্ধ বা রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
খোসাতেই ভিটামিন
আপেলের শতকরা ৭০ ভাগ ভিটামিনই থাকে আপেলের খোসা এবং খোসার ঠিক নীচে। তবে আজকাল অনেকে অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন। কারণ, আপেল উৎপাদনে আজকাল অনেক সময় কেমিক্যাল ব্যবহার করার ফলে আপেলের খোসাতেও তার প্রভাব পরে। তাই খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো বলেই পরামর্শ দেন অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞ।
আপেল ভালো করে ধুয়ে মুছে খাওয়া উচিত
লাল টকটকে যত সুন্দর চেহারা আর লোভনীয়ই হোক না কেন, নানা রকম রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে ভালো করে ধুয়ে এবং মুছে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা।
আপেলকে বলা হয় কবিরাজি ওষুধ
আপেলে যে অ্যাসিড রয়েছে, তা নানা অসুধ হিসেবে কাজে লাগে। আপেল গলা ব্যথা বা কাশির ওষুধ হিসেবে সাহায্য করে। আপেলের চা ‘নার্ভাসনেস’ থেকে কাটিয়ে তোলে। আপেলের মাস্ক ত্বককে সুন্দর ও নরম করে, দাঁতও পরিষ্কার রাখে। এছাড়া, আপেল ঘুম থেকে জাগতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি সাহায্য করে ভালো ঘুম হতেও।
ওজন কমাতে আপেলের সাহায্য
আপেলে যেহেতু ভিটামিন, মিনারেল এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অনেককিছু রয়েছে, তাই আপেল খেয়ে কেউ কেউ ডায়েটিং করেন বা ওজন কমান।
আপেলের জুস
আপেল পানীয় হিসেবেও বেশ জনপ্রিয় জার্মানিতে। শুধু তাই নয়, রয়েছে নানা স্বাদের আপেলের জুস।
আপেল কেক
স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই বিকেলে কফির সাথে ক্রীম কেকের বদলে এক টুকরো আপেল কেকই বেছে নেন।
আপেলের জেলি
কি সুন্দর আর লোভনীয় আপেলের এই জেলি। সবকিছু খাওয়ার সময় তো আর ভিটামিনের কথা ভাবা যায়না! তবে সবকিছুই যদি একসাথে পাওয়া যায়, তাহলে মন্দ কি?
চ্যান্সেলারকে আপেল উপহার
আপেল উপহার হিসেবেও দেওয়া হতে থাকে জার্মানিতে। ছবিতে আপেল রানী চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে ঝুড়ি ভর্তি আপেল উপহার দিচ্ছেন।
সূত্র : প্রতিদিন আপেল খান, ডাক্তারকে দূরে রাখুন [ডয়চে ভেলে, ২১ জুন ২০১৩]