বিশেষ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ ।।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ১৩৮ বস্তা ‘সরকারি চাল’ পাচারকালে জব্দ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ১৪ নভেম্বর রাতে উপজেলার গুনধর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের রাস্তা থেকে এসব চাল আটক করে পুলিশ। রাতেই এগুলো থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খান দিদারকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
পরে গুনধর ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম তল্লাশি করে যে পরিমাণ চাল থাকার কথা ছিল, সেখানে গড়মিল পান ইউএনও। গুদামে যে পরিমাণ চাল থাকার কথা ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি চাল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সালমা আক্তার। তবে ঠিক কী পরিমাণ চাল গুদামে অতিরিক্ত ছিল তা জানাতে পারেননি তিনি।
এ ঘটনায় করিমগঞ্জ থানার এসআই মাসুদ আনোয়ার আকন্দ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। আর গুদামে চাল গড়মিল পাওয়ায় গুনধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল সাকির নূরু শিকদারকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউএনও। এদিকে বিপুল পরিমাণ এ চাল জব্দ হওয়ার ঘটনায় এলাকার তোলপাড় চলছে।
এলাকার লোকজনের দাবি, জব্দকৃত এসব চাল চেয়ারম্যান নিজে তার চাচার বাড়িতে রাখেন। পরে রাতে এগুলো তার লোকদেরকে দিয়ে পাচারের চেষ্টা চালান তিনি।
এলাকার লোকজন জানান, চাল জব্দের খবর পেয়ে ইউএনও উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে চেয়ারম্যানের সাথে দীর্ঘ বৈঠকে বসেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে তৎপর হন।
এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থাকা শত শত লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে এলাকাবাসীকে শান্ত করতে ইউএনও গুদামের চাল তল্লাশি করার সিদ্ধান্ত নেন।
জানা গেছে, গত বন্যায় করিমগঞ্জের অন্যান্য ইউনিয়নের মতো গুনধর ইউনিয়নও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে ৬০০ ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়। তাছাড়া সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসে ইউনিয়নটি।
পিআইও অফিস সূত্র জানায়, ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিজনের নামে ৩০ কেজি চাল ও নগদ ৫০০ টাকা বরাদ্দ হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দ করা চাল ও টাকা বিতরণ না করে রেখে দেয়া হয় গুদামে। পরে অক্টোবর মাসের বরাদ্দ করা ভিজিএফের চাল এক সাথে করে কয়েকদিন আগে বিতরণ করা হয়। তবে ১৮৫ জনের ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়নি। সূত্র মতে, ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে এই ১৮৫ জনের চাল থাকার কথা। কিন্তু এ চালের চেয়ে অনেক বেশি চাল পাওয়া যায় গুদামে। এতে প্রমাণিত হয় এখানে ভিজিএফের চাল নিয়ে নয়-ছয় হয়েছে।
পিআইও অফিস জানায়, মাসের বরাদ্দ মাসেই উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করতে হয়। এগুলো জমিয়ে রাখার নিয়ম নেই। তবে এসব দেখাশোনারও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকেন। এ দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালিত হয়নি।
এলাকার একটি সূত্র জানায়, পুলিশ যে ১৩৮ বস্তা চাল জব্দ করেছে। এগুলো ভিজিএফের চাল। লোকজনকে কম দিয়ে এসব চাল ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি বাড়িতে ধীরে ধীরে জমানো হয়। সেগুলোই প্রকৃতপক্ষে পাচার করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে গুনধর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল শাকির নূরু শিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব চাল কার তিনি জানেন না। এখানে যা হয়েছে তার কোনো কিছুর সাথেই তিনি জড়িত নন।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় জানান, যে ট্রলিযোগে ১৩৮ বস্তা চাল পাচারের চেষ্টা হয়েছিল, এগুলো সরকারি চাল। এ বিষয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ীই এ পদক্ষেপ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
করিমগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে চালের যে গড়মিল পাওয়া গেছে এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান নূরু শিকদারকে জরিমানা করা হয়েছে। আর রাস্তার গাড়ি থেকে যে ১৩৮ বস্তা চাল জব্দ করা হয়েছে- সে ব্যাপার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।