আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইয়াবা বড়িসহ গ্রেপ্তার স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা এবং তাঁর সহযোগীদের ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে পুলিশের সদস্যদের মধ্যে বিরোধও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান ও উসমান গণির মধ্যে চলছে এ বিরোধ।
থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, গত সোমবার ভোরে ভৈরবের শ্রীনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুছা মিয়াকে শ্রীনগরের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা এলাকায় মাদক ব্যবসার একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে তোলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভৈরব থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে তিনি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে নরসিংদী কারাগারে বেশ কিছুদিন জেল খাটেন। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।
এদিকে একই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন শুভ ও মিজান নামের আরও দুই ব্যক্তি। শুভ শ্রীনগরের এবং মিজান কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা মুছার পূর্বপরিচিত এবং মাদক ব্যবসার সহযোগী। এই ঘটনায় মতিউর রহমান বাদী হয়ে মাদক আইনে দুটি মামলা করেন। একটি মামলায় মুছার কাছ থেকে ২০০ এবং অপর মামলায় শুভ ও মিজানের কাছ থেকে ৫০০ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে উদ্ধার হওয়া ইয়াবার হিসাব নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে ওই মাদকচক্রের এক সহযোগীকে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া সূত্র আরও জানায়, মামলায় দুটি অভিযানই একই দিন উল্লেখ করা হলেও আসলে পৃথক দিনে এই দুটি অভিযান হয়েছে। প্রথম অভিযানটি হয় গত শনিবার সন্ধ্যায় ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। এটির নেতৃত্ব দেন মতিউর রহমান। সঙ্গে ছিলেন এসআই অভিজিৎ চৌধুরী, মাজহারুল ইসলাম ও আজিজুর রহমান। এ সময় শুভ ও মিজানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩০০টি ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়। তাঁদের ছাড়িয়ে নিতেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মুছা এসআই উসমানের সঙ্গে দেড় লাখ টাকায় রফা করেন। কিন্তু উসমান টাকা পেলেও এর ভাগ মতিউরকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় খেপে যান মতিউর। তিনি রোববার রাতে গ্রামের বাড়ি থেকে মুছাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসেন। ওই সময় গ্রেপ্তার করা হয় মুছার সহযোগী সালাম মিয়াকে। তবে পরে সালামকে লেনদেনের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে মতিউর রহমান অকপটে অর্থ লেনদেনের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে মুছার সঙ্গে দেড় লাখ টাকার লেনদেন হয় উসমানের। এই টাকা আমি না নিয়ে আসামিদের চালান করে দিয়েছি।’ সালামকে ছেড়ে দেওয়া এবং উদ্ধার করা ইয়াবা বড়ির সংখ্যা কম দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
তবে উসমান বলেন, ‘অভিযানে আমি ছিলাম না। রফাদফার প্রস্তাব আসে মতিউরের কাছ থেকে। সেই অনুযায়ী মুছার সঙ্গে কথা হয়। দেড় লাখ টাকা পেয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারছিলাম, টাকা নিয়ে মতিউর আসামি ছাড়ার ব্যাপারে গড়িমসি করতে পারেন। শেষে আমি ওই টাকা ফিরিয়ে দিই। এই ক্ষোভ থেকে রাতেই মুছাকে গ্রেপ্তার করেন মতিউর।’
অভিযানে অংশ নেওয়া এসআই মাজহারুল ইসলাম জানান, বাসস্ট্যান্ডে অভিযানের সময় শ্রীনগর গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী আলী পালিয়ে যান। তবে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি।
এসআই আজিজুর রহমান বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য যদি বাইরে থেকে লেনদেন করেন, তাহলে তো এর দায় আমাদের নয়।’
অভিজিৎ চৌধুরী দাবি করেন, ধরে এনে ছেড়ে দেওয়ার অভ্যাস তাঁর নেই।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুখলেছুর রহমান বলেন, মুছার গ্রেপ্তার ও ইয়াবা বড়ি উদ্ধার নিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের মধ্যে যা ঘটছে, তা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে হতে পারে।
সূত্র : ঘুষের ভাগ নিয়ে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বিরোধ [প্রথম আলো, ২৯ নভেম্বর ২০১৭]