কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি ।।
আমন ধান কটিয়াদী উপজেলার চাষিদের একটি প্রধান অর্থকড়ি ফসল। উপজেলার একটি পৌর ও ৯টি ইউনিয়নের ১২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়। ধান রোপনের পর থেকে অধির অপেক্ষায় থাকেন কৃষক। সোনালী ফসল ঘরে তুলবেন। আনন্দ-সুখে ছেলে মেয়ে আত্মীয় স্বজন নিয়ে পিঠা পায়েস খাবেন। চাহিদার অতিরিক্ত ধান বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটাবেন।
কিন্তু এ বছর আমন ধান রোপনের সময় কৃষককে পড়তে হয়েছে নানা প্রতিকুলতায়। প্রথমত, বীজ সংকটের কারণে চাষিদের বীজতলা তৈরি করতে দারুণ হিমশিম খেতে হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা চড়া দামে আমন বীজ সংগ্রহ করতে হয়েছে। অধিক মূল্যে বীজ বিক্রির দায়ে ভ্রাম্যমান আদালত ৪জন বীজ ব্যবসায়ীকে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানাও করেছেন।
রোপনের পরে ধানের চারা যখন একটু বড় হয়েছে তখন মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও খোল পচা রোগের আক্রমণ ছিল। কৃষি অফিসের সহায়তায় এর উত্তরণ হলেও কার্তিকের প্রথম দিকে টানা বর্ষণ ও দমকা হাওয়ায় বহু জমির ধানের শীষ নুইয়ে পড়ে। এতে ফলনের কিছুটা ক্ষতি হয়। তারপরও আশায় বুক বাঁধে কৃষক। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন যেন ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারেন।
এ বছর শত প্রতিকুলতায়ও আমন ধানের ভাল ফলন হয়েছে। অগ্রহায়নের শুরুতেই ধান কাটা শুরু হলেও দেরিতে পাকা ধান কেটে মাড়াইয়ের জন্য জমিতেই বিছিয়ে রেখেছেন। একটু শুকালেই জমিতেই মাড়াই করে ঘরে তুলবেন সোনালী ধান। কিন্তু ঘরে তোলার আগেই দু’দিনের অকাল টানা বর্ষণে কৃষকের আর শেষ রক্ষা হলো না। যেন আমন যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে কৃষক এখন দিশেহারা। তাছাড়া বোরো ধানের বীজতলা, রবি শস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে দু’দিনের টানা বর্ষণে।
আমন ফসলের ওপর নির্ভরশীল আচমিতা ইউনিয়নের হারিনা গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান এবং পাঁচগাতিয়া গ্রামের উজ্জল মিয়া জানান, একের পর এক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অনেক আশায় বুক বেঁধে ছিলাম। কিন্তু দু’দিনের বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে তা আমার জানা নাই।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, আমন ধান কেটে জমিতে বিছিয়ে রাখতে নিষেধ করলেও কৃষক তা না মানায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সরকারি ভাবে এ ক্ষতির কোনো পরিমাণ নির্ধারণের নির্দেশনা না থাকায় আমরা তা করিনি।
তিনি আরও বলেন, ১০০ হেক্টর বোরো বীজতলা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। বৃষ্টিপাত আর না হলে তেমন ক্ষতি হবে না। রবিশস্য ৫০০ হেক্টর জমি বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ২০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। ‘যদি বর্ষে আগুনে, রাজা যায় মাগনে’ কৃষক নেতা মস্তোফা কামাল নান্দু খনার এই বচনটি উল্লেখ করে বলেন, অগ্রহায়নের এই অকাল বর্ষণ এক অজানা আতংকে এলাকার মানুষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।