শবনম মুস্তারী স্বর্ণা ।।
ঝিকিমিকি জলের সারল্যে চাঁদভর্তি আকাশের আলোতে দূষণমুক্ত বাতাসে ভাটির মুখ নিকলী উপজেলা। আর সেই ভাটির তনয়া আমি শবনম মুস্তারী স্বর্ণা। ছোট্ট থেকেই আয়না আমাকে বার বার টানতো আর আয়নার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যেন নিজেকে বুঝালাম-
‘‘মানুষ হিসেবে হবে আমার পরিচয়, নারী বা মেয়ে হিসেবে নয়’’।
জলরাজ্যের জলরাশির বিশালতা থেকেই মনটা যেন বিশালতার শিক্ষা নিল। ভাটির মেয়েরা শুধুমাত্র ঘরের ও রান্নার কাজে গৃহে কোণঠাসা হয়ে থাকবে না, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সৃজনশীল কাজের দ্বারা দেশ ও জাতির জন্য সুনাম বয়ে আনবে। সেই ভাবনা নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় স্থান অধিকার করে নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হই। প্রতিনিয়ত এই নাট্যশিক্ষা আমাকে নতুন করে তৈরি করে, নবজন্মের জীবনবোধ হয়ে হাজির হয় মাকড়সার জালের মতো।
নাট্যশিক্ষা শুধু মঞ্চে অভিনয় করার শিক্ষাই দেয় না, দর্শকের শুধু দৃষ্টি আর্কষণই করে না, সৃজনশীল ভাবনার বিকাশও ঘটায়। নিজের প্রতি, দশের প্রতি ও দেশের প্রতি সচেতন করে তোলে। শেক্সপিয়রের কথা অনুযায়ী- পৃথিবীটা যদি রঙ্গমঞ্চ হয়, তাহলে প্রত্যেকের দিক থেকে প্রত্যেকে আমরা অভিনেতা অভিনেত্রী আর বাকি সবাই দর্শক।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে যেই বিষয়ে পড়াশোনা করে, সেই বিষয়ের কর্মক্ষেত্র খুবই কম পাওয়া যায়। আবার নাট্যকলায় পড়াশোনা করে যে সবাই শুধু অভিনয়ই করবে এমনটি না-ও হতে পারে। তবে যে কাজই করি না কেন, সেই ক্ষেত্রে যেন সাড়া জাগাতে পারি। যে কোন কাজে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোনোর দম তৈরি করে এই নাট্যশিক্ষা। যদি পানের দোকানদারও হই, তখন লোকজন যেন সেই দোকানে পান খেতে আসতে বাধ্য হয়।
দোকানটাই তখন পৃথিবী নামক মঞ্চের সেট, পান হল প্রপস আর বাকি সবাই দর্শক। পান যদি ভালো হয় তবেই লোকজন কিনতে আসবে। ঠিক তেমনি অভিনয় যদি খারাপ হয়, দর্শক দেখবে না।
ছোট থেকে আমি বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের সাথে কাজ করার স্বপ্ন দেখেছি। থিয়েটারে ফ্যাশন ভাবনার সমন্বয় করার ভাবনাস্বরূপ স্বপ্ন পূরণের জন্য বিনয়ের সাথে অপেক্ষা করছি আর মন থেকে বিশ্বাস করছি দিনটি অবশ্যই আসবে। নাট্যশিল্পের শিক্ষা নিয়ে পৃথিবীর সমস্ত ফ্রেমে নিজেকে যোগ্যতম হিসেবে দাঁড় করাতে চাচ্ছি এই বচনবোধে-
‘‘জয় হোক থিয়েটারের’’
লেখক : শিক্ষার্থী, অনার্স শেষ বর্ষ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।