অনশনে সহকারী শিক্ষক : এ দায় কার!


রাখী গোপাল দেবনাথ ।।

মানুষ তৈরির কারিগর হলো শিক্ষক। শিক্ষকরা যখন আন্দোলনে এর দায় কাদের? সকলের বেতন যখন বৃদ্ধি করা হচ্ছে তাহলে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করলে সমস্যা কোথায়? সমস্যটা হলো আমাদের চেতনায়। সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে বিদ্যালয়ের বাইরের সকল কাজ করানো সম্ভব; কিন্তু বেতন বৃদ্ধি করা সম্ভব না। হায়রে আমলাতন্ত্র!

প্রধান শিক্ষকদের মার্জনা বিল পাস করে ২য় শ্রেণীতে উন্নতি করতে পার, অবসরের পরে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রস্তাব দিতে পার, পর্দার আড়াল দিয়ে ঘুষ নিতে পার কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিতে কাজ করতে পার না! আমরা ভুলে গেছি প্রাথমিক শিক্ষা হল শিক্ষা ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ। ভুলারই কথা, কারণ আমরা যারা রাজনৈতিক ব্যক্তি, আমলা, সুশীল সমাজের সদস্য তাদের বংশধর বা ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। তাদের ছেলেমেয়েরা হয় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করে, না হয় বিদেশে পড়ালেখা করে।

তাই তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা না করে ATN news মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে কেন তাদের অপমানিত করবে। অথচ এই ১৬ ডিসেম্বর প্রতিটা স্কুলে বিজয় দিবস উদযাপন করল। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বৃক্ষরোপন করে শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালকের আদেশ পালন করল। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ বঞ্চিত। তারাই ভালো-মন্দের ভিত্তিটা স্থাপন করে।

হয়ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর সাহেবের ভিত্তিটা তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভালোভাবে স্থাপন করতে পারেন নাই। পারলে হয় তার জ্ঞানবুদ্ধি কিছু থাকত। সহকারী শিক্ষকদের বিষয়ে মন্তব্য করার আগে একশ’বার চিন্তা করত। প্রক্টর সাহেব ভুলে গেছেন বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য ক্লাস থেকে বিরত ছিলেন। পার্থক্য হল প্রাথমিক শিক্ষকরা পাঠদান বিরত না রেখে ও সকল বাৎসরিক কার্যক্রম শেষ করে আন্দোলন শুরু করেছে। আর প্রক্টর সাহেব সেশনজট তৈরি করে শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করছে। এ দায় কার?

জাতির পিতা যে মর্যাদা দিয়েছিলেন তা পুনরায় বহাল করা হোক। বেতন কাঠামোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পরের অবস্থানটা দেয়া হোক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষকদের। না হলে জাতির পিতার তৈরিকৃত কাঠামো স্তরই নষ্ট হবে। তখন চেতনা কোথায় থাকবে?

বিশ্বের ২০টি দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন $৪০০০০ ডলার। কিন্তু আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা মাস শেষ হওয়ার আগেই বেতনের চেকটা বিক্রি করে লগ্নিকারী মহাজনের নিকট। তাদের নিয়ে ভাবেন। তাদের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো করেন। বেতন কমিশনের কথাই কি বলব! সবাই শুধু কৈয়ের তেল দিয়ে কৈ ভাজতে চায়। কেউ নিচের দিকে তাকায় না। তাকালে বিচার বিবেচনা করত তাদের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের কথা।

এসি রুম ও গাড়ি ব্যবহার না করে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখেন। তাদের মর্যাদার কথা বাদই দিলাম। উন্নত বিশ্বে সবচেয়ে মর্যাদাকর পেশা হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকতা। সরকারের সদিচ্ছাই পারে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। অন্যথায় এ দায়ভার সকলকেই নিতে হবে। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা হবে হুমকির সম্মুখীন। মানসিক শান্তি না থাকলে সঠিক পাঠদান কখনই সম্ভব নয়।

লেখক : প্রবাসী, বুসান, দক্ষিণ কোরিয়া।

Similar Posts

error: Content is protected !!