আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হয়েছে। রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আজ (১৪ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১১টার দিকে শেষ হয়।
ইজতেমা ময়দানে দেশি বিদেশি মুসল্লিসহ মুসলিম উম্মাহর মাগফিরাত-নাজাত কামনা করে সকল মুসলমানের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যের এবং কোরান ও সুন্নাহর অলোকে জীবন পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে মোনাজাত করা হয়। রোববার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়।
এবারই প্রথমবারের মতো বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত বাংলা ভাষায় পরিচালনা করা হয়েছে। ৩৫ মিনিট স্থায়ী মোনাজাতের প্রথম ১৪ মিনিট আরবিতে ও পরের ২১ মিনিট বাংলায় পরিচালিত হয়।
মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকার কাকরাইল জামে মসজিদের পেশ ঈমাম তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্য হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। মোনাজাতে লাখো লাখো মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনিতে টঙ্গীর তুরাগ তীর ও আশপাশের এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে দেশের ১৬টি জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এবং ৮৮টি দেশের বিদেশী মুসল্লিসহ ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করে বলে ধারণা করছে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি।
মোনাজাতে সারা বিশ্বের মুসলমান জাতির সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মঙ্গল কামনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মো. জাহিদ হাসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মতিউর রহমান মতিসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন।
এদিকে, রোববার আখেরি মোনাজাতের আগে সকাল সোয়া ৮টা থেকে বাংলা ভাষায় হেদায়েতি বয়ান শুরু হয়। ঢাকার কাকারাইলের বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি মাওলানা আবদুল মতিন এ বয়ান করেন। সকালে আখেরি মোনাজাতে অংশ গ্রহণের লক্ষ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশের এলাকা। বিশ্ব ইজতেমার মাঠ ছাড়িয়ে চার দিকের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা জুড়ে, সড়ক ও মহাসড়কে, রাস্তার পাশে, বিভিন্ন ভবনের ছাদে এবং দাঁড়িয়ে যে যেখানে স্থান পেয়েছেন সেখানে এই মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।
বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বি গিয়াস উদ্দিন বার্তা সংস্থাকে জানান, আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় ধাপের তিন দিনব্যাপী ইজতেমা পুনরায় শুরু হবে। একইভাবে ২১ জানুয়ারি দুপুরে সকল মানুষের সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মঙ্গল কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে ২০১৮ সালের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হবে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে। আশা করি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বও আমরা ভালো ভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য এবার প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে ৬ জন করে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছেন। পুরো ইজতেমা ময়দানে ৮ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ ইজতেমা মাঠে মোতায়েন রয়েছে। ইজতেমার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য গতবারের চেয়ে এবার আরো ১৫শ’ পুলিশ সদস্য বেশি নিয়োজিত করা হয়েছে।
এদিকে আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি মো. গিয়াস উদ্দিন বার্তা সংস্থাকে জানান, শুক্রবার রাতে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ মুরুব্বিদের এক পরামর্শ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের পরামর্শ অনুয়ায়ী আগামী বছরের (২০১৯ সালের) প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে ১১ জানুয়ারি এবং তা শেষ হবে ১৩ জানুয়ারি। দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা ১৮ জানুয়ারি শুরু হয়ে তা ২০ জানুয়ারি শেষ হবে।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী
এদিকে গণভবন থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (১৪ জানুয়ারি) পরিবারের সদস্য ও দলের কয়েকজন নেত্রীকে সাথে নিয়ে মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তিনি।
