বাংলাদেশ উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে। এ জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভৌত বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে। সারাদেশের প্রায় একই চিত্র। এসব সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নের নানাদিক নিকলী উপজেলার নিকলী ইউনিয়নের প্রেক্ষিতে দেখার চেষ্টা করি।
প্রথমেই আমরা দেখে নেই গত সাতাশ বছরে নিকলীতে কী কী ত্রুটিপূর্ণ, ভুল স্থানে, প্রয়োজনহীন স্থাপনা নির্মিত হয়েছে।
১। রোদার পুড্ডা-কুর্শা সেতু : এটি ত্রুটিপূর্ণ সেতু। সংকীর্ণ, গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়। সেতুর দুইপ্রান্ত নদীর উপর নির্মিত হয়েছে এবং সেতুর রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
২। হাসপাতাল-নিকলী ডাকঘর যাওয়ার পথের সেতু : এটি বর্তমানে বিলীন হয়েছে। টিকে আছে বক্স কালভার্ট হিসাবে ক্ষীণধারা বা ধারাবিহীন হয়ে। পানি প্রবাহ সচল না থাকার প্রভাব আগামী এক দশকে প্রকট হয়ে দেখা দিবে।
৩। মোহরকোনা-কামালপুর সেতু : নিকলীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু। গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী এমনকি মানুষ চলাচলেও এটি অত্যন্ত ঝুঁকির। অপ্রশস্ত, অত্যধিক ঢালু ও বাঁকা সংকীর্ণ সংযোগ সড়ক।
৪। তেলিহাটি-আফিস সেতু : গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী, অপ্রশস্ত, অত্যধিক ঢালু ও বাঁকা সংকীর্ণ সংযোগ সড়ক হওয়ায় গণমানুষের কোনো কাজে আসেনি। বরং সোয়াইজনীতে পরিবেশ আইন না মেনে একাধিক সেতু নির্মাণ করায় নদী মৃত হয়েছে। নিকলী বাজারে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়েছে।
৫। ষাইটধার-গোবিন্দপুর সেতু : আধুনিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার সময়ে একটি নদীর ধারাকে এমনভাবে ব্যাহত করার নজীর বিরল।
৬। নিকলী থানার অবস্থান : সোয়াইজনী নদীর তীরে হওয়া উচিত ছিল। কারণ নদীপথে সবগুলো ইউনিয়নে যোগাযোগ করতে হয় বা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে নদীপথে দ্রুতগতির বাহন এখন খুবই সুলভ।
একটি জনপদের সহজাতভাবে গড়ে ওঠা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নই প্রকৃত উন্নয়ন যাতে ওই জনপদের জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকবে। আরো অনেক স্থাপনা রয়েছে নিকলীতে। আমার ধারণা দেশজুড়ে এরকম আরো আছে।
নিকলীর ভবিষৎ সমস্যা : নিকলীতে প্রাকৃতিক জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল। আবাসিক স্থাপনা বৃদ্ধি ও ভুল স্থাপনা নির্মাণ, জলাশয় ভরাট ইত্যাদি কারণে ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ বিনষ্ট হবে। কারণ খোলা জায়গা কমছে, কমছে গাছপালা। ঘরবাড়ির দূরত্ব কম, বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। পয়ঃনিষ্কাশনের পরিকল্পিত ব্যবস্থা অনুপস্থিত। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন। পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দারা নতুন ঢাকা চলে যাচ্ছে বাপ-দাদার ভিটামাটি ছেড়ে। এর কারণ এক সময়ের লাগামহীন ও পরিকল্পনাহীন নির্মাণ। পুরান ঢাকার রাস্তা সরু ও জঞ্জালময়। নিকলীতেও একই অবস্থা আসন্ন।
তাই নিকলীতে দীর্ঘমেয়াদী, টেকসই, পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রয়োজন। এজন্য ভূমিকা রাখতে পারেন জনপ্রতিনিধিরা, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সর্বোপরি এলাকাবাসি। প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর প্রভাবহীন উন্নয়নের জন্য আগামি একশ বছরের জন্য পরিকল্পনা স্থির করে ভবিষ্যৎ সকল নির্মাণ কাজ করতে হবে। যেখানে প্রতিটি পাড়ায় শিশুদের জন্য খোলা মাঠ থাকবে। অবসরে সময় কাটানোর জন্য, বিনোদনের জন্য সংঘ ঘর থাকবে। শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। আবাসিক এলাকা ও ব্যবসায়িক এলাকার সীমানা ঠিক করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থার লাগামহীন অবস্থার নিরসন করতে হবে।