মনের কষ্ট যায় নারে বাবা!!! তাহলে…

বিকাল বেলা। হঠাৎ সেলফোনটা বেজে উঠলো। “হ্যালো” বলার সাথে সাথেই বায়না,
-“ডো-নাট” আইনো।
–জ্বি বাবা। আর কিছু লাগবে?
-“ডো-নাট” আইনো।
–ভাইয়ার কিছু লাগবে?
-“ডো-নাট” আইনো; ভাইয়া কিছু লাববে? হুম, ভাইয়ার শম্মা লাববে।
–ঠিক আছে। রাখি?
-আল্লাহ হাফেজ। কাটি কাটি…

ডো-নাট। কুড়মুড়ে চাকার আকৃতির বিস্কুটের চারপাশে ঘিরে থাকে চকলেট। দেখতে যতটা ইয়াম্মি ইয়াম্মি ভাব, খেতে আমার মোটেও পছন্দ না। ছেলেদেরও না। কিন্তু নামটার আকর্ষণই হয়তো শিশুদের এই খাবারের প্রতি টানে।

#

রাত সোয়া ১০টা। মাথায় “ডো-নাটের” ফরমায়েশ নিয়ে অফিস থেকে বের হলাম। এ কী! “ডো-নাট” বিক্রেতা “ডিসেন্টের” শো-রুম তো বন্ধ! বিকল্প ভাবনায় পাইকারি বাজারে ঢুকলাম। দোকানিরা মালামাল গুছাচ্ছে। সবারই বাসায় ফেরার তাড়া দেখা গেলো।

বাসায় ছোট-বড় শিশু দু’জন। বরাবর একই জিনিস দুটোই নিতে হয়। এদিন একটু ব্যতিক্রম করতে চাইলাম। ছোটছেলের জন্য তাদের পছন্দের “কিন্ডার জয় ফর বয়েজ” একটি কিনলাম। বড় ছেলে যেহেতু শর্মা খাবে তাই ওর জন্য আর নিলাম না।

নিয়মিত হোটেলে গিয়ে শর্মার আয়োজনও দেখলাম গুটিয়ে ফেলেছে! যাক, সমস্যা নেই। দ্বিতীয় চয়েজ তো রয়েছেই। নান-গ্রিল! নেয়া হলো। বাসায় ফেরার পর সম্ভাব্য পরিবেশ নিয়ে ভাবছিলাম। বড় ছেলে ২য় শ্রেণিতে পড়ছে। নিশ্চয় ওর জন্য “কিন্ডার জয়” না নেয়ার যুক্তি বুঝবে। মানসিকতায় বড় হবার সুযোগও তো ওকে করে দিতে। যাক, বাসায় ফিরলাম।

বড় ছেলে তাফিফ খাবারে পছন্দের প্রথম সারির আইটেম দেখে খুশিই খুশি। হুম, ভালোই লাগলো। কিন্তু ছোট ছেলে তাইফ তার “ডো-নাট” না পেয়ে হৈ-চৈ বাঁধিয়ে বসলো। কী করি করি, ভাবছি। কোলে তুলে পাশের রুমে গেলাম। বোঝানোর চেষ্টা করলাম। চুপ হয়, কিন্তু মানছে না। তার “ডো-নাট” চাই-ই চাই। অবশেষে পকেট থেকে সেই “কিন্ডার জয়” বের করলাম। হঠাৎ দেখে খুশিতে আটখানা!

-ভাইয়া, আমার কিন্ডার জয়। আমার কিন্ডার জয়।…. ফর বয়েজ।

এবার তাফিফের মেজাজ ভেতরে ভেতরে জ্বলে উঠলো! তবে চুপ। মাথা নিচু।

–কি হয়েছে বাবা?
জিজ্ঞেস করতেই নিচু স্বরে উত্তর :

-কিছু না। ফর বয়েজ…! আচ্ছা থাক। ও-তো ছোট। তবে দুইটা আনতে পারতা!
–তোমার জন্য তো পছন্দের খাবার এনেছিই। তুমি বড়ও হয়েছো। কিন্ডার জয় দিয়ে কি করবা?
-লাগবে না, থাক। দুইটা আনতা!
–ঠিক আছে। পরে এনে দিবো।

#

ফ্রেশ হয়ে সবাই খেতে বসলাম। তাফিফ নিশ্চুপ। মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে গ্রিল-নানের দিকে। মাঝে মাঝে আড়চোখে তাইফের হাতের দিকে। তাইফও অতিযত্নে লুকিয়ে রাখছে “কিন্ডার জয়”। ছো মেরে নিয়ে না নেয়!!

–মন খারাপ বাবা? দু’দিন আগেই তো এনে দিলাম। আর বড় মানুষ, কিন্ডার জয় দিয়ে কি করবে? ভারি গলায় উত্তর-
-না। মন খারাপ না।… খুব ধীরে ধীরে দুই টুকরা খাবার মুখে দিলো। একেবারে কাঁদো কাঁদো অবস্থা…
–ঠিক আছে বাবা। অন্য দিন তোমার জন্য নিয়ে আসবো। একটা বেশিই দিবো। তবু মন খারাপ করো না। ও তো তোমার ছোট ভাই-ই। খেয়ে নাও। তোমাকে দিয়েই খাবে-খেলবে।
-মন খারাপ না। খাই। দুইটাই আনতে পারতা! বলে আরেক টুকরা মুখে দিলো। আম্মু, আর খাবো না। বমি বমি লাগছে।
–কেন বাবা! (বোঝানোর স্বরে) বললাম তো, অন্য দিন এনে দিবো। এখন খেয়ে নাও। তাইফ, ভাইয়াকে দিয়ো?
-ঠিক আছে। দিবো, দিবো। ভাইয়া, তোমাকে দিবো।

তাফিফের গালে হাত বুলিয়ে দিলো তার ছোট ভাই। অভিমানের পারদ কিছুটা গলেছে বোধ করলাম। এবার অভিভাবকের আসন থেকে তাফিফকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম।

–বাবা, এই খাবার (কিন্ডার জয়সহ সব কিছুই) একটা নির্দিষ্ট সময় পর হজম হয়ে যাবে। বাথরুমে যাবে, এবং ফ্ল্যাশ করার সাথে সাথে ফিনিশ। কিন্ডার জয়ের ভেতরে যে খেলনাটা পাবে, কিছু সময় খেলবে। পুরনো হয়ে যাবে, ভেঙে যাবে। এটি চাওয়ার আগ্রহও শেষ হয়ে যাবে। আবার নতুন কিছু খুঁজতে থাকবে। নতুন কিছুতেই আবার আনন্দ পাবে। কিন্তু “কিন্ডার জয়ের” জন্য যে মন খারাপ করে রেখেছো তা দেখে মা-বাবার মনে কষ্ট হচ্ছে; এই কষ্টটা অনেক বড়। এটা শেষ হবার নয়।
-হ্যাঁ। বুঝেছি। মনে কষ্ট লাগলে, এটা শেষ হয় না। কিন্ডার জয় না পেয়ে আমারটাও!

লেখক : তোফায়েল আহছান

 

*** আমার দুই ছেলে। তাফিফ আহসান ও তাইফ আহসান। তাদের সাথে সুন্দর সময় কাটছে। এমন অনেক ঘটনাই ঘটছে হরহামেশা। মিলেমিশে আছি অনেক ভালো। আলহামদুলিল্লাহ। সবার কাছে আমার ছেলেদের সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য দোয়া চাই।

Similar Posts

error: Content is protected !!