এস এম মুকুল ।।
ফয়জুন্নেসা মণি লিখছেন ছোটবেলা থেকেই। স্কুলজীবন থেকেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮ এ প্রকাশিত হয়েছে কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ এবং ৬ষ্ঠ বই ‘নিমন্ত্রিত জোছনা’। বইটিতে কবির বিচিত্র ভাবনার কাব্যিক ব্যঞ্জনার প্রকাশ ঘটেছে ভিন্ন ভিন্ন কবিতায়।
কবি বলছেন- ‘বোবার চোখে হাজার স্বপ্ন/ … যার আকাশে অনেক বৃষ্টি/পানির পিপাসা তার কিছুতেই মেটেনা।’ তাঁর কবিতা পাঠ করলে পাঠক সহসা ডুবে যাবেন হৃদয় সাগর অতলে। কবি ফয়জুন্নেসা মণি পেশায় সংগীতের শিক্ষক; ঢাকার বনশ্রীতে অবস্থিত রেডিয়্যান্ট স্কুল এন্ড কলেজের রেডিয়্যান্ট কালচারাল একাডেমির। এছাড়াও তিনি আবৃত্তি শেখাচ্ছেন ঢাকার বনশ্রীতে অবস্থিত সু-অঙ্কন একাডেমিতে।
তিনি বনশ্রী’র আব্দুর রাজ্জাক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর কবিতায় আছে যেমন প্রেম, তেমন আছে বিরহ- আছে মৃদুকণ্ঠে উচ্চারিত প্রণয় প্রতারণার তীব্র প্রতিবাদ। যেমন কবি বলেছেন- ‘তন্দ্রার মাঝে খুঁজেছি আমি নক্ষত্র রাতের আলো-আঁধারের মায়াকে।/ খুঁজেছি জোছনার সাথে কুয়াশার মিত্রতা।/ আর আমার বন্ধুকে – যে/ঘৃণার কঠিন পিণ্ডটাকে ভালবাসার রঙ্গিন/ মোড়কে সাজিয়ে অহরহ সূক্ষ্ম প্রতারণার জালে আটকিয়ে/ আড়ষ্ট করে রেখেছে এই আমাকে।’ কবি অপর কবিতায় বলেছেন- ‘আমি ভেঙ্গে ফেলি সব শৃঙ্খল তোমার আমার মায়ার বন্ধন/ ছিন্ন হয়না শুধু অনন্ত অসীম/ রংহীন দুঃখের কঠিন শাড়ি/ অষ্টপ্রহর আষ্টে-পৃষ্টে বেঁধে রেখেছে বলে..’।
ফয়জুন্নেসা মণি’র কবিতার মেজাজটা একটু ভিন্ন- মৃদুমন্দ টলমল ঢেউয়ের দুলুনির মতন। তিনি কঠিনেরে বলেছেন সহজভাবে আবার সহজকে বড় কঠিন করে তুলেছেন। এ যেন অসময়ে সময়ের ডাক অথবা নিছক কিছু একান্ত ভাবনার অনুরণণ। তাঁর কবিতায় সম্পষ্টত ফোটে উঠেছে বেদনার্ত সময়ের অরিন্দম কন্ঠস্বর। তিনি বলেছেন- ‘স্বপ্নবাদীরা হিংস্র হয়ে উঠেছে/ চৌদিকে রোবটের বিচরণ/ গলা চিপে হত্যা করছে মানবতা/ জঘন্য কর্মকাণ্ডে গড়ে উঠছে- অবান্তর সভ্যতা।’
কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ- ‘নিঃসঙ্গতা মুক্তির ছাড়পত্র’ প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে কলেজ জীবনে। এই কাব্যগ্রন্থের জন্য সিলেট বিভাগে কবিতা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ কবি ফয়জুন্নেসা মণি’কে লেখা প্রকাশের ৮টি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে সন্মানিত করা হয়।
কবি ও লেখিকা ফয়জুন্নেসা মণি প্রদায়ক হিসেবে লিখেছেন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের উপ-সম্পাদকীয়তে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা, নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সাহিত্য বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক প্রথম আলো’র বন্ধুসভায়, দৈনিক ভোরের কাগজের পাঠক ফোরাম, দৈনিক ইনকিলাবের সাহিত্য পাতা, দৈনিক ডেসটিনির সাহিত্য পাতা, সাপ্তাহিক এখন, দৈনিক জাহান (ময়মনসিংহ), মাসিক শিক্ষা বিচিত্রা, বিভিন্ন সাহিত্য ম্যাগাজিনসহ অনলাইন নিউজ পোর্টালে।
কবি ফয়জুন্নেসা মণি’র প্রকাশিত অন্যান্য বইগুলো হচ্ছে- ‘চুপিচুপি’, ‘গৃহসজ্জার কলাকৌশল’, ‘জীবন সাজাতে-জীবন রাঙাতে’, ‘জীবনে বিজ্ঞান’, ‘জীবন সূত্র’ ইত্যাদি। কবি ফয়জুন্নেসা মণি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন সরকারী তিতুমির কলেজ, ঢাকা থেকে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি লেখক, বিশ্লেষক এস এম মুকুল-এর সহধর্মিনী। কবি ফয়জুন্নেসা মণি’র জন্ম ১৭ মে সুনামগঞ্জের নয়াহালট গ্রামে নানার বাড়িতে। তিনি বাবা মো. আব্দুল হাকিম অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মা মোছা: জিনাতুন্নেসা খানমের একমাত্র কন্যা। কবি ফয়জুন্নেসা মণি ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। তিনি সংগীত, আবৃত্তি ও উপস্থাপনায় বেশকিছু সম্মাননা অর্জন করেছেন। ’নিমন্ত্রিত জোছনা’ বইটি প্রকাশ করেছে অমরাবতী প্রকাশন। বইটি পাওয়া যাবে বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে লিটল ম্যাগ কর্ণারে অমরাবতীর স্টলে। ৪৮ পৃষ্ঠার বইটির দাম রাখা হয়েছে ১২০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন এস এম মুকুল। বইটি রকমারি ডটকম-এর মাধ্যমেও পাওয়া যাবে।