আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
মায়ের পেনশন (অবসর-ভাতা) ভোগ করার লোভে তিন বছর আগে মৃত মায়ের দেহ রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করে আগলে রাখলেন ছেলে। মৃতদেহের পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে মৃতদেহে ফরমাল্ডিহাইড (মৃতদেহ সংরক্ষণের রাসায়নিক) মাখিয়ে ঘরের ফ্রিজে মমি করে রাখা হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত খবর পেয়ে বুধবার রাতে পুলিশ মায়ের দেহটি উদ্ধার করে। এ ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার বেহালা থানার ঘোলসাপুরের জেমস লং সরণিতে। ছেলের নাম শুভব্রত মজুমদার (৫০)। একসময় পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন শুভব্রত। পড়াশোনা করেছিলেন লেদার টেকনোলজি নিয়ে।
প্রতিবেশীরা জানান, আগে কলকাতাসংলগ্ন বানতলা চর্মনগরীর একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন শুভব্রত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। তার পর থেকে বিশেষ কিছু করতেন না। ভবঘুরে স্বভাবের মানুষ ছিলেন শুভব্রত। থাকতেন মা বীণা মজুমদার ও বাবা গোপাল মজুমদারের সঙ্গে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে শুভব্রতর মায়ের মৃত্যু হয় কলকাতার এক হাসপাতালে। এরপর তিনি প্রতিবেশীদের জানান, মায়ের মৃতদেহ ‘পিস হেভেনে’ রাখা রয়েছে। কিন্তু মায়ের মরদেহ যে বাড়িতে এইভাবে শুভব্রত রেখেছিলেন, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি প্রতিবেশীরা। বাড়িতে আইসক্রিম রাখার মতো বিশাল আকারের একটি ফ্রিজের মধ্যে মায়ের মৃতদেহ লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। আত্মীয়স্বজন এলে ঘরে তাঁদের নিয়ে যেতেন না শুভব্রত।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, শুভব্রতর এই কীর্তির কথা জানতেন তাঁর ৮৯ বছর বয়সী বাবা গোপাল মজুমদারও। বীণা মজুমদার সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। অভিযোগ, মায়ের পেনশন পাওয়ার জন্যই শুভব্রত এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিন পুলিশ বীণা মজুমদারের ডেথ সার্টিফিকেট দেখতে চাইলে বৃদ্ধ গোপাল মজুমদার বা তাঁর ছেলে শুভব্রত মজুমদার কেউই তা দেখাতে পারেননি। বেহালা থানার পুলিশ এ ঘটনায় ছেলে শুভব্রতকে আটক করেছে। বৃদ্ধ গোপাল মজুমদারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
প্রাথমিক জেরাতে পুলিশকে শুভব্রত জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞানের একদিন এমন উন্নতি ঘটবে যে মৃতদেহে প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। সেই বিশ্বাসেই মায়ের মৃতদেহে যাতে কোনোরকম বিকৃতি না ঘটে, সে জন্য সেটা মমি করে রেখেছিলেন বলে জানান।
তবে পুলিশের ধারণা, একদিকে মায়ের পেনশন পাওয়ার লোভ আর অন্যদিকে মায়ের মৃতদেহ থেকে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়, তার জন্যই মায়ের পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে রাসায়নিক দিয়ে ফ্রিজের মধ্যে রেখেছিলেন শুভব্রত।
পুলিশ জেরাতে আরো জানতে পেরেছে, বীণা মজুমদার মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছিল। কিন্তু সেই সার্টিফিকেট গোপন করে অবৈধভাবে মৃত মায়ের লিভিং সার্টিফিকেটও জোগাড় করে নিয়েছিলেন শুভব্রত। সেই সার্টিফিকেট দিয়েই মায়ের নামে মাসে মাসে ৫০ হাজার রুপি পেনশনও তুলতেন তিনি, যা দিয়ে ছেলে ও বাবার সংসার খরচ চলত।
বুধবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বেহালা থানার ডিসি (সাউথ ওয়েস্ট) নীলাঞ্জন বিশ্বাসের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী অভিযান চালায়। সেই অভিযানে তিন বছরের গোপন করা তথ্য সামনে চলে আসে। পুলিশ শুভব্রতর ঘর থেকে একাধিক কেমিক্যালের বোতল উদ্ধার করেছে।
জেরাতে বৃদ্ধ গোপাল মজুমদার জানিয়েছেন, ছেলে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিল মরা মাকে বাঁচিয়ে তুলবে সে। সেই বিশ্বাসেই তিনি বিষয়টি কাউকেই জানাননি।
সূত্র : পেনশনের লোভে ঘরে মায়ের মৃতদেহ সংরক্ষণ! [এনটিভি অনলাইন, ৫ এপ্রিল ২০১৮]