বিশেষ সংবাদদাতা ।।
সিনেমা হল ভাড়া নিয়ে বছরের পর বছর চলেছে রমরমা সেক্সবাণিজ্য। সিনেমার নামে চালানো হতো রগরগে দৃশ্যের কাটপিস। কেবিন নামের অন্ধকার প্রকৌষ্ঠে নিরাপদে চলতো যৌনলীলা। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হতো প্রমোদবালা। প্রকাশ্য এমন সেক্সবাণিজ্যের ফাঁদে পড়ে দিন দিনই বিপথগামী হচ্ছিল এলাকার স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও।
কিশোরগঞ্জের পুলেরঘাট এলাকার ফাল্গুনী সিনেমা হলে বেপরোয়া এমন সেক্সবাণিজ্যের হোতা সুলতান মিয়া (৩৭) অবশেষে ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বৈকালিক শো চলার সময়ে সিনেমা হলটিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে হলের গোপন দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় দর্শকরা।
তবে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মুর্শেদ জামান, এসআই সোলাইমান কবির, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই ফিরোজ আহমেদ ও আহুতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মতিউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত অভিযানিক দলের হাতে আটক হয় হোতা সুলতান। এ সময় জব্দ করা হয় প্রজেক্টর, কম্পিউটারের সিপিও, কাটপিস সিডি ও অশ্লীল পোস্টার। সন্ধ্যায় তাকে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়ে আসার পর সেখানে বসে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালতের বিচারক সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোহাম্মদ সাঈদ সিনেমা হলের ভাড়াটিয়া পরিচালক সুলতান মিয়াকে ২ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরে তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডিত সুলতান মিয়া সদরের চৌদ্দশত ইউনিয়নের চুপিনগর গ্রামের আবদুল নবীর ছেলে।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন যাবৎ সুলতান মিয়া হলটিতে অশ্লীল চলচ্চিত্র প্রদর্শন ছাড়াও রমরমা সেক্সবাণিজ্য চালিয়ে আসছিল। অশ্লীল কাটপিস, যৌনসঙ্গী আর নিরাপদ যৌনাচারের আকর্ষণে হলটিতে ভিড় লেগেই থাকতো। এসবের ফাঁদে পড়ে এলাকার উঠতি বয়সীরা ছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হচ্ছিল। সিনেমা প্রদর্শনের নামে দিনের পর দিন হলটিতে এভাবে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতে থাকায় স্থানীয়দের মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছিল। স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে মঙ্গলবার বিকালে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ হলটিতে অভিযান চালায়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের জিজ্ঞাসাবাদে সুলতান মিয়া জানায়, ফাল্গুনী সিনেমা হলের মালিক পাকুন্দিয়ার আদর্শপাড়া গ্রামের মতিউর রহমান। ৬-৭ বছর আগে তার কাছ থেকে সুলতান এটি ভাড়া নেয়। মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ার চুক্তিতে সিনেমা হলটি পরিচালনা করে আসছিল সে। প্রতিদিন হলটিতে দুপুর, বিকাল ও রাতে তিনটি শো চালানো হতো। প্রতিটি টিকিট বেঞ্চে ৫০ টাকা ও কেবিনে ১০০-১৫০ টাকা করে নেয়া হতো। মঙ্গলবার বিকালের ওই শোতে ১৮টি টিকিট বিক্রি হয়েছিল বলেও সে জানায়।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকালে ওই হলটিতে ডিবি ও থানা পুলিশের একটি টিম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালায়। ওই সময় হলটিতে কাটপিস জুড়ে দিয়ে বস্তির রাণী সুরিয়া নামের একটি সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছিল। অভিযানের সময় দর্শকদের পাওয়া না গেলেও অশ্লীল কাটপিসসহ সিনেমা হলটির পরিচালক সুলতান মিয়াকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে দোষ স্বীকার করায় সিনেমাটোগ্রাফ আইন ও চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইনে বিচারক আবু তাহের মোহাম্মদ সাঈদ অভিযুক্ত সুলতান মিয়াকে দণ্ডাদেশ প্রদান করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।