মহাস্থান প্রেসক্লাব সদস্যদের ধামইরহাট আলতাদিঘী পরিদর্শন

আজিজুল হক বিপুল, মহাস্থান (বগুড়া) প্রতিনিধি ।।

মঙ্গলবার মহাস্থান প্রেসক্লাব সদস্যরা গিয়েছিলাম নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান এবং পাহাড়পুর সোমপুর বিহার দেখতে। মহাস্থান প্রেসক্লাবের ধারাবাহিক আনন্দ ভ্রমণের অংশ হিসেবে উল্লেখিত ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করা হয়। প্রথমে আমরা যাই আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান দেখতে। চলুন জেনে নেয়া যাক আলতাদিঘীর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।

আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান। রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগের আওতাধীন নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় পাইকবান্ধা রেঞ্জের অধীন ধামইরহাট বিটে অবস্থিত। রাজশাহী হতে ১১০ কিঃমিঃ উত্তরে নওগাঁ জেলা সদর হতে ৬০ কিঃমিঃ, জয়পুরহাট জেলা সদর হতে ২৭ কিঃমিঃ পশ্চিমে বগুড়া জেলা সদর হতে ৮০ কিঃমিঃ পশ্চিমে এবং ধামইরহাট উপজেলা হতে উত্তরে প্রায় ৫ কিঃমিঃ এর মধ্যে এই বনাঞ্চল তথা জাতীয় উদ্যানটির অবস্থান। আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানের মোট আয়তন ২৬৪.১২ হেক্টর। ইহা মইশুড়, জয়জয়পুর, ছোট মোল্লাপাড়া, বাখরপুর, চকযদু, জোতমামুদপর ও দাদনপুর মৌজার ১৩১.৫৭ হেক্টর সংরক্ষিত বন, ৩৫.৪৯ হেক্টর রক্ষিত বন ও ৯৭.০৬ হেক্টর অর্জিত বন এলাকা নিয়ে বিস্তৃত।

শালবন এলাকার মাঝে ৪২.৮১ একর আয়তনের একটি বিশাল দিঘী বিদ্যমান আছে। এর নাম আলতাদিঘী। নওগাঁ জেলার এই দিঘীর ন্যায় বৃহৎ ও মনোমুগ্ধকর দিঘী আর নেই। দিঘীটির পাড় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রাধীন এবং জলাশয় জেলা প্রশাসক, নওগাঁর খাস খতিয়ানভূক্ত। দিঘীটির দৈর্ঘ্য ১.২০ কিঃমিঃ, প্রস্থ ০.২০ কিঃমিঃ। দিঘীটির উত্তর, দক্ষিন, পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে বন বিভাগের সৃজিত বাগান ও প্রাকৃতিক শালবাগান রয়েছে, পূর্ব পার্শ্বে কিছু সাঁওতাল উপজাতীর বসবাস রয়েছে। আলতাদিঘীর চতুর্পাশের বাগান, প্রাকৃতিক শালবন এবং সাঁওতাল আদিবাসীদর ভিন্নধর্মী জীবনাচারন দিঘীটির গুরুত্ব ও সৌন্দর্য্য আরও বৃদ্ধি করেছে যা উপভোগ করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আলতাদিঘী পরিদর্শনে আসেন। বর্তমানে দিঘীতে চিত্ত বিনোদনের জন্য কোনরকম সুযোগ সুবিধা নেই।

ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠী চাপ, বনভূমি সংকোচন ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে ধামইরহাট শালবন এলাকার জীববৈচিত্র্য হুমকীর মুখে। প্রাকৃতিকভাবে শাল বৃক্ষ এখানকার প্রধান বৃক্ষ হলেও আজ তা ক্ষয়িষ্ণু প্রজাতীর বৃক্ষ। সহযোগী প্রজাতী যেমন-আমলকী, হরিতকীর বহেরা, শিমুল, কুম্ভী, তেন্ডু ইত্যাদি এখন আর নেই বললেই চলে। খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবে এলাকাটি এখন বন্যপ্রাণী শুন্য। অথচ একদা এলাকাটি প্রচুর শিয়াল, বেজী, বন বিড়াল, খেক শিয়াল, গুইসাপ ও হরেক রকমের পাখীর কলকালীতে পরিপূর্ণ ছিল।

আনুমানিক ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দে এ অঞ্চলের রাজা বিশ্বনাথ জগদল রাজত্ব করতেন। সেই সময় এতদাঞ্চলে পানির অভাব প্রকট ধারন করেছিল। কথিত আছে একদিন রানী স্বপ্নে দেখলেন যে, উক্ত এলাকার পানির সমস্যা নিরসনের জন্য একটি বৃহৎ দিঘী করতে হবে। সেই মতে রাণী রাজাকে বললেন আমি পায়ে হেটে যাব এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমার পা ফেটে রক্ত না বের হবে ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটতে থাকব। আমি যতদুর পর্যন্ত হাঁটব ততবড় একটি দিঘী খনন করে দিতে হবে। রাণীর কথামত পাইকপেয়াদা বাঁদিসহ রাণী হাঁটতে শুরু করলেন। হাঁটতে হাঁটতে রাণী বহুদুর চলে যাচ্ছিলেন। তকন পাইক পেয়াদারা চিন্তা করল রাণী যদি হাঁটতে থাকেন তাহলে রাজার পক্ষে এতবড় দিঘী খনন করা সম্ভব হবে না। তাই তারা হাঁটার এক পর্যায়ে রাণীর পিছন থেকে রাণীর পায়ে আলতা ঢেলে দিয়ে চিৎকার করে উঠে বলল রাণীমা আপনার পা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। তখন রাণীমা উক্ত স্থানে বসে পড়লেন। রাজা বিশ্বনাথ জগদল সে পর্যন্ত উক্ত দিঘীটি খনন করলেন। রাণীর পায়ে আলতা ঢেলে দেওয়ার প্রেক্ষিতে দিঘীটির নামকরণ করা হয় “আলতাদিঘী”। শালবনের মাঝে প্রাকৃতিকভাবে সৃজিত খাল রয়েছে। উহার কিছু অংশে স্বল্প পরিমাণে পানি প্রবাহ বিদ্যমান।

আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যান

Similar Posts

error: Content is protected !!