আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
কটিয়াদী পৌর এলাকার সাধারণ কৃষক হায়দার আলীর মেয়ে প্রমি এখন অলিম্পিক জয়ের স্বপ্ন দেখছে। ইতোমধ্যে উপজেলা এবং জেলার গণ্ডি পেরিয়ে দেশসেরা সাঁতারু হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে প্রমি।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকার নরিন মডেল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শফিঊল আলম রিপনের অনুপ্রেরণায় স্কুলসংলগ্ন পুকুরে সাঁতারে প্রমি আক্তারের প্রথম হাতেখড়ি। তখন সে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। ২০১৫ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার মুক্ত সাঁতারে জেলায় ১ম স্থান অর্জন করে তাক লাগিয়ে দেয় সে। তারপর থেকেই উৎসাহ বেড়ে যায়।
মা-বাবা এবং শিক্ষকেরাও তাকে অনুপ্রেরণা দিতে থাকেন। প্রমিও তার অনুশীলন অব্যাহত রাখে। ২০১৬ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার মুক্ত সাঁতারে জাতীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান লাভ করে এবং একই বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে আন্তঃজেলা বয়সভিত্তিক মহিলা সাঁতার প্রতিযোগিতায় ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইলে জেলায় ২য় স্থান লাভ করে।
বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন আয়োজিত সেরা সাঁতারুর খোঁজে বয়সভিত্তিক ১১-১২ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে ১ম স্থান অর্জন করে প্রমি। এ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রমি ৫ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করে। ২০১৭ সালে ১০০ মিটার মুক্ত সাঁতারে জাতীয় পর্যায়ে ১ম হয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত হয় প্রমি। তারপরই নজরে আসে বিকেএসপির। প্রমিকে ভর্তি করা হয় বিকেএসপিতে।
ওই বছরই (২০১৭) বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) আয়োজিত ৩য় বিকেএসপি কাপ সাঁতার প্রতিযোগিতায় ৭টি বিভাগে অংশগ্রহণ করে সবক’টিতেই ১ম স্থান লাভ করে। বিভাগগুলো হচ্ছে, ১০০ মিটার বাটারফ্লাই, ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ২০০ মিটার ইন্ডিভিজুয়াল মিডলে, ১০০ মিটার বাটারফ্লাই, ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্টোক, ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্টোক, ১০০ মিটার ব্যাক স্টোক, ৫০ মিটার ব্যাক স্টোক। বর্তমানে প্রমি সাভার বিকেএসপিতে ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে মিরপুর সৈয়দ নজরুল ইসলাম সুইমিং কমপ্লেক্সে ৩ বছর মেয়াদে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
প্রমি আক্তারের ভাষায়, আমার মা-বাবা ও শিক্ষকের অনুপ্রেরণা, প্রচেষ্টা এবং আল্লাহর রহমতে আমি বাংলাদেশের সেরা সাঁতারু হতে পেরেছি। এখন আমি স্বপ্ন দেখছি অলিম্পিক জয়ের। সেই লক্ষেই আমি অনুশীলন করে যাচ্ছি। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যেন আমি আমার লক্ষে পৌঁছতে পারি।
প্রমির মা রাহিমা আক্তার বলেন, আমাদের অভাবের সংসার। ৫ সন্তানের মাঝে প্রমিই বড়। তাকে সাধ্যমত যত্ন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে এখন সরকার থেকেই সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি। আমি আশা করি, দেশবাসীর দোয়া থাকলে আমার মেয়ে একদিন অলিম্পিক জয় করে আমাদের এবং দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
সূত্র : অলিম্পিক জয়ের স্বপ্ন দেখছে দেশ সেরা সাঁতারু কটিয়াদীর প্রমি [কিশোরগঞ্জ নিউজ, ১৯ এপ্রিল ২০১৮]