রাখী গোপাল দেবনাথ ।।
আমার প্রিয় শহর কিশোরগঞ্জ। ছাত্র জীবনের বড় একটা সময় অতিবাহিত হয়েছে এখানে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে বন্ধুদের তালিকাটাও বড় ছিল। সেই সাথে সিনিয়ররাও ভালবাসতেন। তাই প্রায়ই পূর্ণিমার মধ্য রাতে সংগঠনের সবাই ঘুরতে বের হতাম। তখন নিরাপত্তা নিয়ে কোন চিন্তাও ছিল না। রাতে পুলিশের টহলও দেখতে পেতাম। বিভিন্ন প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতাম। তবে পরিচয় দেয়ার পর রুমে যাওয়ার কথা বলত। চলে যেতাম।
কথাগুলো বলার কারণ হল কিশোর সন্ত্রাসী। তখন রাতে আমাদের চোখে তেমন কিছু পড়েনি। শহরটা ছিল শান্ত। এখনও সরকারি চাকুরিজীবীদের পছন্দের শহর এটা। একবার এলে কেউ ট্রান্সফারের চিন্তা করেন না। সকল রাজনৈতিক ব্যক্তি একসাথে বসে চা পান করেন সন্ধ্যার পর। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছিল না।
কিন্তু সম্প্রতি কিশোর সন্ত্রাসীদের নিয়ে সবার ঘুম নষ্ট। কিশোরগঞ্জ এখন অস্থিতিশীল শহর। সবাই আতংকিত। আমরা যারা প্রবাসী আছি, তারাও আতংকিত। আঁধার নামার সাথে সাথে মনে হয় কিশোরগঞ্জ শহরটা গ্রাস করবে খুদে সন্ত্রাসীরা। প্রশ্নটা হল এরা কারা, এদের পরিচয় কি, এরা জনজীবন বাধাগ্রস্ত করে কি চায়???
দৈনিক খবরের কাগজগুলো পড়ে একটা বিষয় বুঝা গেল এরা উঠতি বয়সী। যাদেরকে পথভ্রষ্ট করা খুবই সহজ। হয়ত এটাই হয়েছে। রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আশ্রয়ে শান্ত শহরকে অশান্ত করছে স্বার্থান্বেষী মহল। কিন্তু চিন্তার বিষয় হল প্রশাসন এখনও নিরব। এখনো অপরাধীরা পর্দার অন্তরালে। আর কতজন হাসপাতালে গেলে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে।
সমস্যা সমাধানে বর্তমান পুলিশ সুপার মহোদয় ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের পরামর্শ নিতে পারেন। চুরি ছিনতাইয়ের মহানগরকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে এসেছেন। অপরাধ অনেকাংশ হ্রাস পেয়েছে শহরে। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ সকল ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে একত্রিত হয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। পত্রিকাগুলোর ধারণা কিন্তু এড়াতে পারবে না ছাত্র সংগঠনগুলো।
মূলত আধুনিক বিশ্বের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অসংগঠিত সমাজ ব্যবস্থায় দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের নেতিবাচক ফল হলো কিশোর অপরাধ। পরিবার কাঠামোর দ্রুত পরিবর্তন, শহর ও বস্তির ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ, অপসংস্কৃতি এর জন্য দায়ী। পারিবারিক পরিবেশ, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি, সামাজিক সংগঠনে সম্পৃক্ততা কিশোর অপরাধ হ্রাস করতে পারে।
লেখক : প্রবাসী, বুসান, দক্ষিণ কোরিয়া।