খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।
কিশোরগঞ্জের নিকলীতে তথ্য সংগ্রহের জেরে আজ (বৃহস্পতিবার ২৬ এপ্রিল) সকাল সাতটায় আবদুর রহমান রিপন (৩৮) নামে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ নেতা সোহেল (৩৪) ও তার বাহিনী। রিপনকে নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাংবাদিক আবদুর রহমান রিপন একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিকলী উপজেলা সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত।
তিনি জানান, অতি দরিদ্রদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের নাম করে একটি চক্র নিকলীর বিভিন্ন গ্রামের ঘর প্রত্যাশীদের নিকট থেকে টাকা আদায় করছে। প্রকল্পটির সত্যতা ও ঘর প্রত্যাশিদের নিকট থেকে টাকা আদায়ের বৈধতা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য গত মঙ্গলবার দুপুরে নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে যান।
ইউএনও মোহাম্মদ মোহাম্মদ ইয়াহইয়া খানের সাথে সাংবাদিক রিপনের আলাপকালে ইউএনওকে সার্বক্ষণিক সময়দাতা ছাত্রলীগ নেতা সোহেল বাধ সাধে। ইউএনও’র উপস্থিতিতেই সোহেল উপজেলায় কর্মরত কোনো সাংবাদিক যে কোনো তথ্যের জন্য আসলে গাছে বেঁধে পেটানোর হুমকি দেয়। রিপন ওই দিনই স্থানীয় প্রেসক্লাবে বিষয়টি জানান। জরুরি সভা ডেকে সাংবাদিক নেতারা পর দিন বুধবার নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
বুধবার বিকাল ৩টায় বসবার সময় নির্ধারিত হলে সোহেল ক্ষিপ্ত হয়ে ২টায় তার বাবা নূরুল ইসলাম (৬০), বড় ভাই নাজমুল (৪০), ছোট ভাই সজীবসহ (২৬) সহযোগীদের নিয়ে রিপনের নিকলী সদরের মাইজহাটি গ্রামের বাসায় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। রিপনের স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা পারভীন আক্তার ও মা তহুরা বেগমকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিয়ে মারতে যায়। তাদের হামলায় রক্তাক্ত আহত হয় রিপনের চাচী নুরুন্নাহার (৬০)।
খবর পেয়ে নিকলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এতে সোহেল আরো ক্প্তি হয়ে উঠে। বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় রিপনের বাড়ির সামনের একটি দোকানে বসা অবস্থায় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত সোহেল বাহিনী রিপনের ওপর আক্রমণ চালায়। রিপনের মাথাসহ শরীর কুপিয়ে জখম করে। নিস্তেজ রিপনকে ফেলে রেখে সোহেলের দলটি রিপনের বাড়ির ফটক দিয়ে ঢুকতে ভাঙচুর করে। না পেরে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে বাড়ির ভিতরে ঢুকলে ভয়ে রিপনের স্ত্রী, মাসহ লোকজন পালিয়ে যান। এ সময় সোহেল গং রিপনের ছোট ভাই সেনাবাহিনী থেকে ছুটিতে আসা রবিন ও উদ্দীপনকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে যায়।
সকালেই নিকলী থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন ভূইয়া সঙ্গিয় দল নিয়ে হাসপাতালে পরিদর্শন করেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত নিকলী সদর ইউপি সদস্য কহিনুর আক্তার জানান, প্রথম দিনের ঘটনায় আমি রিপন সাহেবের বাড়িতে ছিলাম। সোহেলদের আক্রমণের ধরনে ভয় পেয়েছি।
ইউএনও মোহাম্মদ ইয়াহইয়া খান তার কক্ষের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও সোহেলের সার্বক্ষণিক থাকার বিষয়ে নীরবতা পালন করেন। তিনি জানান, গৃহ নির্মাণ করে দেয়ার এবং সোহেল গৃহ প্রত্যাশিদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রথমে জানেন না বললেও পরে গৃহ প্রদানের তালিকা চলার কথা স্বীকার করেন।
নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ দলে সোহেলের পদ পদবী দেখে বলতে হবে এবং আজকের ঘটনাটি মীমাংসা করার চেষ্টা করছি বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
রিপনের বাবা ফজলুর রহমান বলেন, সন্ত্রাসী দলটির ভয়ে বাড়িছাড়া। লুটতরাজের পরিমাণ এখনো জানি না। সোহেল ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের আশির্বাদপুষ্ট। ভয়ে আছি।
সোহেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বিষয়টি একান্তই ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রিপনকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে জেলা সদরে নেয়া এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তার পরিবার নিশ্চিত করেন।