নিকলীতে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না ঠিকাদার

খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমবিইএল-এমএইচ (জেভি)র কারণে প্রায় ৫শ’ একর জমিতে চাষ করা যায়নি। ক্ষতিপূরণের বদলে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে একাধিক কৃষকের দাবি।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিকলীর সাথে করিমগঞ্জ উপজেলার ১০ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের দুই পাশে কৃষি জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে সড়ক প্রতিরক্ষা ব্লক। কৃষকদের দাবি, সড়কটির প্রতি পাশে ১০ গজের মধ্যে ব্লকগুলি রাখা যেতো। দশগুণ করে বেশি জায়গা নিয়ে এসব ব্লক ছিটিয়ে রাখায় প্রায় ৫শ’ একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তারা আরও জানান, সড়ক কাজের বাইরে জমি ব্যবহারে ঠিকাদারেরা তাদের কোনো অনুমতি নেননি। সড়কটির নকশাও বিকৃত করা হয়েছে। অনেক কৃষক স্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একাধিক লিখিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেয়া হলেও প্রতিকার মিলছে না। জমিগুলি অনাবাদী থাকায় প্রান্তিক কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে একটি মহলের দাবি।

তারা জানান, পত্তনের (বাৎসরিক লিজ) টাকা মরসুমের আগেই মালিক পক্ষকে পরিশোধ করতে হয়েছে। চাষাবাদ সময় পেরিয়ে ফসল তোলার সময় যাচ্ছে। অদ্যাবধি জমি খালি না হওয়ায় জমি মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। অনেক কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত জমিটিই খাদ্যের একমাত্র উৎস থাকায় পরিবারগুলি চরম খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

মজলিশপুর গ্রামের জুলহাস উদ্দিন জানান, ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন দূরে থাক, কাজের কোনো রকম ব্যাঘাত ঘটলে দেখে নেবে বলে কন্ট্রাক্টরের লোকজন আমাদের হুমকি দেন।

নানশ্রী গ্রামের বাহারুল হাসান বাবুল জানান, শত শত একর জমি নষ্ট করে ক্ষতিপূরণ দেয় না, এমন শুধু আমাদের ক্ষেত্রেই দেখছি। এ অন্যায় আমরা সকলে মিলে প্রতিহতের চেষ্টা করছি। কন্ট্রাক্টরের শক্তির কাছে আমরা অসহায়।

এমবিইএল-এমএইচ (জেভি)র মুখপাত্র মামুন ভীতি প্রদর্শনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে স্থানীয়দের একটু কষ্ট মেনে নিতেই হবে। তিনি আরও জানান, ক্ষতিপূরণ দেয়ার কোন চুক্তি নাই।

নিকলী উপজেলা প্রকৌশলি আবদুর রহমান মুহীন জানান, কৃষকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিভিন্ন মিটিংয়ে একাধিকবার উপস্থাপন করা হয়েছে। দেখছি কি করা যায়।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ এপ্রিল রোববার এলজিইডির ইতিহাসে এক প্যাকেজে সর্ববৃহৎ বাজেটের নিকলী হতে করিমগঞ্জ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সড়ক কাজের উদ্বোধন হয়। দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। চুক্তিমূল্য ৮০ কোটি ৫০ লক্ষ ৪১ হাজার ৩৮৪ টাকা। সড়কটি নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় এমবিইএল-এমএইচ (জেভি) নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

Similar Posts

error: Content is protected !!