সাগরে পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু বানালো চীন

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও ব্রিজ হতে যাচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সামুদ্রিক সেতু, আর তা তৈরি করেছে চীন। মূলত চীনের ঝুহাই শহর, ম্যাকাও প্রদেশ এবং হংকংয়ের মাঝে যোগাযোগ স্থাপন করতে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ এই সেতু। সেতুটি ১ জুলাই ২০১৮-তে উদ্বোধন হবার কথা রয়েছে। ৫ মে, শনিবার এই ব্রিজ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও ব্রিজটি মোট ৩৪ মাইল (৫৫ কিলোমিটার) দীর্ঘ। একদিকে চীনের মূল ভূখণ্ডের ঝুহাই ও ম্যাকাও এবং অন্যদিকে হংকংয়ের মাঝে তা অবস্থিত। ২০০৩ সালে প্রথম এই সেতু তৈরির প্রস্তাব করা হয়। তখন থেকেই বিভিন্ন দিক থেকে তা সমালোচনার মুখে পড়েছে। অভিযোগ আছে, শুধু যোগাযোগ উন্নত করার উদ্দেশ্যেই নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করাই এই সেতু তৈরির উদ্দেশ্য।

হংকং এবং তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের শীতল সম্পর্ক বজায় রয়েছে বহুদিন ধরেই। এই সেতু তৈরির মাধ্যমে চীন হংকংয়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

এই সেতু তৈরির পেছনে একটি বড় কারণ ছিল চীনের ‘গ্রেটার বে এরিয়া’ প্রকল্প। এই সেতুটি তৈরি করা হয়েছে চীনের একটি উপসাগরের উপর দিয়ে। এই এলাকায় অবস্থিত ১১টি শহরের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে বলে আশা করছে চীন। এই এলাকায় তিনটি আলাদা আলাদা মুদ্রা, তিন ধরনের পাসপোর্ট এবং দুইটি ভাষা (ক্যান্টনিজ এবং ম্যান্ডারিন) প্রচলিত। সেতুটি তৈরির ফলে এই বিশাল অঞ্চলটি উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সেতুটি চীনের পর্যটনের উন্নতিতেও কাজে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে চীন থেকে হংকংয়ে গিয়ে এক-দুইদিন অবস্থান করে আবার ফিরে আসেন পর্যটকরা, আশেপাশের শহরগুলো তেমন একটা ঘুরে দেখেন না। এই সেতুটি উদ্বোধন হলে হংকং থেকে চীনে ৪৫ মিনিটের মাঝেই যাতায়াত করা যাবে।

সেতুটিকে নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে এখনো। হংকং এবং চীনের মাঝে ইতোমধ্যেই যাতায়াতের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে, এরপরেও এই বিশাল সেতু তৈরিকে টাকার শ্রাদ্ধ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যোগাযোগের বদলে বরং হংকংয়ের ওপর চাপ তৈরি করাই চীনের উদ্দেশ্য বলে তারা মনে করেন।

সেতুটি তৈরিতে বিশাল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে চীন। ৭৫৬ কোটি ডলার খরচ হয়েছে সেতুটি নির্মাণে, এর মাঝে ঋণের অর্থ ৪৩২ কোটি। হংকং দেয় ১৩৮ কোটি, ঝুহাই দেয় ১৪৩ কোটি এবং ম্যাকাও দিয়েছে ৪৩ কোটি।

পরিবেশবাদিরা এই সেতুর বিরোধিতা করে আসছেন শুরু থেকেই। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, হংকংয়ের সংরক্ষিত চাইনিজ হোয়াইট ডলফিন প্রজাতিকে বিপন্ন করে তুলেছে এই সেতুর নির্মাণ কাজ।

শুধু ডলফিন নয়, বরং মানুষের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে এই সেতু। নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে সাতজন কর্মী নিহত এবং ২৭৫ জন আহয় হয়েছে, জানিয়েছে সিএনএন।

এমন সমস্যা সত্ত্বেও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে এসেছে। তা ২০১৬ সালের শেষের দিকে উদ্বোধন করার কথা থাকলেও এখন ২০১৮ সালের ১ জুলাই জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য তা উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে চীন।

হংকং-ঝুহাই-ম্যাকাও ব্রিজটি মোট ৩৪ মাইল (৫৫ কিলোমিটার) দীর্ঘ। ছবি: সিএনএন

সূত্র : সাগরে পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু তৈরি করল চীন  [প্রিয় ডটকম, ৫ মে ২০১৮]

Similar Posts

error: Content is protected !!