আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে একবার ঈর্ষার বিষ ঢুকে পড়লে তা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ নয়। এমনকী চরম ঈর্ষা থেকে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক অপরাধও। ঈর্ষার ধরন বা রকমফের নিয়ে পৃথিবী জুড়ে একাধিক মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা হয়েছে। মনস্তত্ত্ববিদেরা বলেন, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে একটু হিংসের তাপ থাকা ভালো। তাতে নাকি প্রেমের রসটাই গাঢ় হয়! কিন্তু সমস্যা হল, ঈর্ষা একটা দু’মুখো ছুরির মতো। একদিকে ঈর্ষা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের বাঁধনটাকেই শক্ত করে, আবার অন্যদিকে ঈর্ষার ফণা বশে না রাখতে পারলে তা শেষে হাতের বাইরে বেরিয়ে ছোবল মারতে পারে সম্পর্কটাতেই। ফলে সুখী দাম্পত্যজীবন পেতে হলে ঈর্ষাকে বাগে রাখতেই হবে।
স্বামীর সঙ্গে কথা বলুন
মাঝেমধ্যে ছোটখাটো বিষয়ে বুকের মধ্যে ঈর্ষার পিন ফোটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু বাস্তবসম্মত আচরণ আর অসুস্থতার মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য আছে। আপনার মনে কোনও সমস্যা তৈরি হলে স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করুন। উদাহরণ দিয়ে দিয়ে বলুন ওঁর কোন কোন আচরণ আপনাকে ঈর্ষান্বিত করে তুলেছে। কখনওই এমনভাবে কথা বলবেন না, যাতে মনে হয় আপনি ওঁকে দোষারোপ করছেন বা নিজের ঈর্ষার স্বপক্ষে যুক্তি খাড়া করছেন। শুধু আপনার খারাপ লাগার অনুভূতিটুকুই প্রকাশ করুন।
বাস্তবের মাটিতে দাঁড়ান
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঈর্ষার বীজ লুকিয়ে থাকে হীনম্মন্যতা বোধ বা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কোন কোন পরিস্থিতি আপনার মধ্যে হিংসের জন্ম দিচ্ছে? বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, অপরিণত বয়সে মানসিক আঘাত বা অত্যাচারের শিকার হয়ে থাকলে তা অনেক সময় মনের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বা সব হারিয়ে ফেলার ভয়ের জন্ম দিতে পারে। দরকারে মনোবিদের সাহায্য নিন, না হলে আপনি বিষাদগ্রস্তও হয়ে পড়তে পারেন।
দমবন্ধ করা সম্পর্ক কি চান?
দু’জন পরিণতমনস্ক মানুষ সম্পর্কে আবদ্ধ হলে তাঁদের উচিত পরস্পরের নিজস্বতাকে স্বীকৃতি দেওয়া। তা না হলে সম্পর্কটা দম বন্ধ করা হয়ে যায়। যেহেতু জীবনের প্রতিটি বাঁকে সম্পর্কের রং পালটায়, ধরন পালটায়, তাই সবসময় স্বামীর প্রতিটি মুহূর্ত দাবি করবেন না। সেটা সম্ভব নাও হতে পারে। ওঁকে সম্মান করুন, নিজেদের সম্পর্কটারও মর্যাদা দিন।
অসুস্থতা এবং…
ঈর্ষা অসুস্থতার পর্যায়ে চলে গেলে আপনি স্বামীর সমস্ত আচরণেরই ভুল অর্থ বের করতে থাকেন। নিজের ব্যক্তিগত জীবনটা উপভোগ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় আবার মাত্রাতিরিক্ত ঈর্ষা থেকে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তারি পরিভাষায় এরকম মানসিক অসুস্থতার নাম ‘ওথেলো সিনড্রোম’। ওথেলো সিনড্রোমে আক্রান্ত একজন মহিলা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে থাকেন, স্বামী তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।
সাহায্য মিলবে কীভাবে?
আত্মবিশ্লেষণ করে বা স্বামীর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেও যদি দেখেন ফল হচ্ছে না, তা হলে বন্ধুদের কাছে মনের কথা খুলে বলতে পারেন। বন্ধুদের কাছ থেকে একটা পক্ষপাতশূন্য মতামত ও পরামর্শ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেইমতো নিজের আচরণে পরিবর্তন আনুন। তাতেও কাজ না হলে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিতেই হবে।
সূত্র : সম্পর্কে ঢুকতে দেবেন না ঈর্ষার বিষ [ফেমিনা, ১১ মে ২০১৮]