আবহাওয়া পরিবর্তনে হাওরে ফিরেছে স্বস্তি

খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

বৈরি আবহাওয়ার কারণে বোরো ফসল নিয়ে বিপাকে পরা হাওরবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। শনিবার (১২ মে ২০১৮) হতে সূর্যের দেখা মিলায় হতাশা কাটিয়ে পূর্ণোদ্দমে ফসল তুলছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নিকলীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইতিমধ্যেই ৬৫ শতাংশ বোরো জমির ধান কাটা হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এ উপজেলা ও কটিয়াদী, করিমগঞ্জের অংশ নিয়ে বড় হাওর, সিংপুর ইউনিয়নের গোরাদিঘা, জোয়ারের হাওরের কয়েক হাজার হেক্টর আকাটা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

এসব জমির ধান কাটাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক মিললেও শ্রমমূল্য আকাশচুম্বি। উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষকরা অর্ধেক ভাগে ধান কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। অপর দিকে সৃষ্ট গাঁদলায় (কর্দমাক্ততা) কাটা ধান পরিবহনে ভোগান্তির শিকার কৃষকরা। ভারি বৃষ্টির কারণে কাটা ধান মাড়াইও সম্ভব ছিলো না। দিনের পর দিন স্তূপাকারে থাকার কারণে রঙ ফিকে হওয়াসহ ধানে চারা গজিয়ে উঠেছে।

উপজেলার ৭ ইউনিয়নের সর্বত্রই এমন দৃশ্য। দামপাড়া ইউনিয়নের কামালপুর হাওরে গিয়ে দেখা যায় কৃষাণ-কৃষাণীদের স্বপ্নের ফসল রক্ষার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।

কামালপুর গ্রামের কৃষক আবদুল হালিম (২৭)। জোয়ানশাহি হাওরে তার সাড়ে ৪ একরের মধ্যে আড়াই একর জমি পানির নীচ থেকে কেটে এনেছেন। গাঁদলার (বৃষ্টিতে সৃষ্ট কর্দমাক্ততা) কারণে খলাতেই (ফসল মাড়াই স্থান) স্তূপ করে রাখা ছিলো। ইতিমধ্যে চারা গজিয়ে উঠেছে স্তূপগুলিতে। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় সেই ধান মাড়াই ও শুকানো হচ্ছে। তিনি জানান, হাজার টাকার উর্ধ্বে শ্রমিক দরে ধান কেটেছি। উৎপাদন খরচ বেড়ে তিনগুণে দাঁড়িয়েছে। এখন আবার ধানের রং মরে গেছে। না শুকাতে পেরে চারাও গজিয়েছে। ন্যায্যমূল্য না পেলেও ভাতে মরবো না।

একই দশা মোহরকোণা ঢালার নাজিমুদ্দিনের। ৭ একর জমি করেছিলেন তিনি। ব্রি-২৮ জাতের একর দু’য়েক জমির ফসল ঘরে তুলেছেন। এখন ব্রি-২৯ জাতের ধান পেকেছে। কিছু জমি কেটে এনেছেন। বৃষ্টি আর কাদাতে উপেক্ষা করে মাড়াই দিলেও শুকাতে পারেননি। জানালেন, গত বারের বিপর্যয়ের পর অবর্ণন মাশুল গুনেছেন জীবনে। তাই শেষ রক্ষার চেষ্টা করছেন মাত্র। স্রষ্টার ওপর ভরসা রেখেছিলেন। বিমুখ করেনি।

নিকলী প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ আক্তার ফারুখ জানান, গত ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়া সংকেত ভালো ছিলো না। আপাতত ভয় কম।

নিকলী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, এ উপজেলায় ১৫ হাজার ১২৫ হেক্টর বোরো লক্ষমাত্রার ৮৫ হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই। তবে শ্রমবাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

Similar Posts

error: Content is protected !!