কটিয়াদীতে কোটি টাকা নিয়ে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট উধাও

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে শিউলী আক্তার (৩০) নামে এক ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পালিয়ে গেছে। প্রতারিত মানুষগুলো এ কারণে প্রতিদিন ভিড় করছেন স্বামী মো. রফিকুল ইসলামের বাড়ি উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামে।

এলাকাবাসী জানান, কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের বাসিন্দা কাঠ ব্যবসায়ী মোঃ আসাব উদ্দিনের পুত্র মো: রফিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম শেষ করেন। নরসিংদী জেলার কোর্টে যাতায়াত করার সময় পরিচয় হয় মনোহরদী উপজেলার ব্র্যাক অফিসের এক ম্যানেজারের। ওই ম্যানেজারের মাধ্যমে শিউলী আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় রফিকের।

শিউলী আক্তার

তখন শিউলী নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দেয়। এছাড়াও আইনজীবি মোঃ রফিক উদ্দিন মেয়ে এবং যশোরের সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ আফিল উদ্দিনের ভাতিজি বলে পরিচয় প্রদান করে। এমনকি ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে নিজের নামে বাসা এবং কয়েকটি ফ্যাক্টরি রয়েছে বলে জানান তিনি। পরিচয় সূত্রে কিছুদিন পর শিউলি রফিককে বিয়ের প্রস্তাব দেন। রফিক প্রস্তাবে রাজি হয়ে মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালিয়া গ্রামে কাজি অফিসের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা দেনমোহরে ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর বিয়ে করেন।

বরের বাড়িতে এসেই বাড়ির দেয়াল তৈরিসহ নতুন ঘর নির্মাণ করেন। শাশুড়ির নামে ১২ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রাখেন। এলাকায় জনপ্রিয় ও আস্থাভাজন হতে মসজিদ ও স্কুলের উন্নয়ন কাজ শুরু করেন। হঠাৎ এর কিছুদিন পরই তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার এসিল্যান্ড হিসেবে বদলি হয়েছেন বলে জানান।

আর তখন থেকে তিনি কটিয়াদী উপজেলার ভোগপাড়া খাদ্য গুদামের সংলগ্ন ৪ তলা ভবনে বাসা ভাড়া নেন এবং অফিসে যাওয়ার নাম করে শিউলী মাঝে মধ্যে প্রাইভেট কারযোগে বাসা থেকে বের হতেন।

এক পর্যায়ে তিনি প্রচার করেন, সারা বাংলাদেশের জজকোর্টগুলোতে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করা হবে। আর তিনি সেই নিয়োগ কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন। চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এভাবে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে মনোহরদী, কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক লোকের কাছ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।

এদের কয়েকজনকে তিনি ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদান করে গত বৃহস্পতিবার কৌশলে টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। ভুক্তভোগী একজন পাকুন্দিয়া উপজেলার মাসুদ মিয়া। তিনি বলেন, আমাকে সে একটি নিয়োগপত্র প্রদান করে। নিয়োগপত্রটি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে দেখালে তিনি তা ভুয়া বলে জানান। এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় জানাজানি হলে চাকরিপ্রত্যাশী লোকজন শিউলী আক্তারের কথিত স্বামী রফিককে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।

স্বামী রফিকুল ইসলাম জানান, আমি তার প্রতারণার শিকার হয়েছি। লোকজনের টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি কটিয়াদী মডেল থানায় প্রতারক শিউলী আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে কটিয়াদী মডেল থানার ওসি জাকির রব্বানি জানান, তদন্তের পর মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। রফিকুল ইসলামের দায়ের করা অভিযোগটি আমরা খতিয়ে দেখছি।

Similar Posts

error: Content is protected !!