আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় শতভাগ ফেল করা ১২২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করে সরকারি অনুদান (এমপিও) ও অনুমোদন বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে।
গত ৬ মে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এবারের পরীক্ষায় ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। গত ৯ বছরের মধ্যে মাধ্যমিকে পাসের হার এটাই সবচেয়ে কম। এছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন।
এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমেছে বিগত বছরের চেয়ে। ১০৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারেনি, গত বছর এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৯৩টি। এবারও আট বোর্ডের মধ্যে শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রাজশাহী বোর্ডে সর্বোচ্চ। এ বোর্ডের শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০৬টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ঢাকা বোর্ড।
এসএসসির ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পরপরই সব বোর্ড চেয়ারম্যানকে নিয়ে সচিবালয়ে নিজ কক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বৈঠকে শিক্ষা সচিবেরাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে শূন্য পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এ ছাড়া ফলাফলে নিম্নমুখী সূচকের কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন চেয়ারম্যানদের। বোর্ড চেয়ারম্যানদের শতভাগ অকৃতকার্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ডেকে এনে কারণ জানতে চাওয়ার নির্দেশ দেন এবং ফলাফলের সব সূচকের নিম্নমুখী হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে বলেন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করেছে স্ব স্ব বোর্ড। গত ১৩ মে মাদরাসা বোর্ডের আওতাভুক্ত শতভাগ ফেল করা স্কুল কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছে। সাধারণ বোর্ডের অধিভুক্ত স্কুলগুলোর বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
শতভাগ ফেল করা মাদরাসার মধ্যে ১৯টি এমপিওভুক্ত। সেগুলো হচ্ছে- গাজীপুর কাপাসিয়ায় বিলাসী মদিনাতুল উলুম বালিকা আলিম মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ পাকুন্দিয়ায় খামা বালিকা দাখিল মাদরাসা, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল বখশিয়া দাখিল মাদরাসা, নববাগঞ্জ উপজেলা সদরের সাজাহানপুর ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা, নওগাঁ পত্মীতালয় বড় বিদিরপুর দাখিল মাদরাসা, ছোট মাহারানদি টেকনিক্যাল দাখিল মাদরাসা, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বেড়েবাবাড়ির সিনিয়র আলীম মাদরাস, শিবগঞ্জের মেদিনিপাড়া মোজাদ্দিদিয়া দাখিল মাদরাসা, দিনাজপুর পার্বতীপুরের ঝিনাইকুরি ওসমানিয়া দাখিল মাদরাসা, যশোর কেশবপুরের প্রতাপপুর দাখিল মাদরাসা, সাতবাড়িয়া দাখিল মাদরাসা, ইমান নগর এম বি জি দাখিল মাদরাসা, বরিশাল উড়িরপুরে মুন্সির তালুক বালিকা আলিম মাদরাসা, পিরোজপুরের নেসারবাদ মুজাদ্দেদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, পুটয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, পুটয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, পটুয়াখালী সদরে লোহালিয়া কে এম হক বালিকা দাখিল মাদরাসা, টাঙ্গাইলের চাতিলা সেফালিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসা এবং মাগুরা মোহাম্মদপুরের রিজিয়া বুবিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা।
এ বিষয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফউল্লাহ বলেন, শতভাগ ফেল করা ৯৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে তাদের শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ফেল করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে না। এ কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে মাত্র একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আমরা বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করছি। তাদের আর পুষে রাখা হবে না।’
অন্যদিকে, সাধারণ আট বোর্ডের ১৬টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ ফেল করেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শতভাগ অকৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ঢাকা বোর্ডের অধীনে তিনটি স্কুল রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- গাজীপুর কাপাশিয়ার কিরাটি পূর্ব পাড়া ড. এ রহমান গার্লস হাই স্কুল, ফরিদপুর মধুখালির গয়েশপুর বকশিপুর হাই স্কুল এবং জামালপুর সরিষাবাড়ির গুইঞ্চা আওনা এস ই এস ডি পি হাই স্কুল। ওই তিন স্কুলের ৩০ শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অতীতে অধিকাংশ স্কুল-কলেজ-মাদরাসার অনুমোদন-স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি নিয়মানুযায়ী প্রাপ্যতা না থাকলেও নানাভাবে তদবির করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। পরে তা এমওপিওভুক্ত করা হয়েছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটিতে রয়েছেন সরকারদলীয় এমপির মনোনীত ব্যক্তিরা। তারা বিভিন্নভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে খবরদারি করছেন। নিয়োগবাণিজ্যসহ সর্ব ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করছেন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখার যৌক্তিকতা কতটুকু, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা দ্রুত শূন্য পাসের কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ করব। উপযুক্ত জবাব না পেলে অনুমোদন বাতিলেরও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’