মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি ।।
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে ৪ বার নির্বাচিত এমপি ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম এমপি। মঙ্গলবার (২৯ মে) বাদ জোহর নিজ জন্মস্থান লালিয়ারহাট মাদ্রাসা মাঠে সর্বশেষ জানাযা নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর আগে হাটহাজারী মাটি ও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হতে গণমানুষের জননেতার ৫ম জানাযার নামাজ হাটহাজারী পার্বত্বী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়। দল-মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ জানাযা নামাজে অংশ গ্রহণ করেন।
সকাল সাড়ে নয়টার আগে বিদ্যালয় মাঠ হাজারো মুসল্লি অহিংস রাজনৈতিক ব্যক্তিকে শেষবারের মতো একবার দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছেন জানাযাস্থলে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় পুরো মাঠ। সকল রাজনৈতিক ব্যক্তির উপস্থিত ও হাজারো মানুষের অংশ গ্রহণে যেন এক সম্প্রীতির সেতু বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। হাটহাজারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
উক্ত জানাযা নামাজে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা সৈয়দ ইবরাহিম হোসেন বীর প্রতিক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক মেয়র সাবেক রাষ্ট্রদূত মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মাহবুব আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক সদস্য ও উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ্ব ইউনুছ গনি চৌধুরী, হেফাজতে ইসলাম নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মীর মোঃ হেলাল উদ্দিন, হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ, সদস্য সচিব সোলায়মান মঞ্জু, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, জাকির হোসেন, যুবদল নেতা শাহেদ আজম, হাসান মুকুল, পৌরসভা সহায়ক কমিটির সদস্য মোঃ জাফর মেম্বার, উপজেলা প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম জনি, যুগ্ম সম্পাদক তকিবুল হাসান চৌধুরী তকি, হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নুরুল কবির তালুকদার সদস্য সচিব ওহিদুল ইসলাম টিটুসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
হাটহাজারী স্কুল মাঠে জানাযায় ইমামতি করেন উপজেলা মসজিদের ইমাম মাওলানা কামাল উদ্দিন। সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ পুরো বিএনপি পরিবারে। উল্লেখ্য, যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি হিসেবে বিএনপির রাজনীতিতে হাতেখড়ি সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের। পরে বিএনপি থেকে হয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
১৯৯১ সালে প্রথম ধানের শীষে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৬, ২০০১ সালে সংসদ সদস্যসহ মোট ৪ বার নির্বাচিত হন। ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনসহ নগর বিএনপির আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। সর্বশেষ বিএনপির কাউন্সিলে তাকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনোনিত করা হয়।
সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তিনি গত রোববার (২৭ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ২৮ মে প্রথম জানাযা ঢাকা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২য় জানাযা, ঢাকা সুন্নিয়া আলিমা মাদরাসা মাঠে ৩য় জানাযা শেষে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় হেলিকপ্টার যোগে নিয়ে আসেন। সোমবার বাদ আছর নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে ৪র্থ জানাযা, মঙ্গলবার সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকার হাটহাজারী পার্বত্বী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১১টায় ও সর্বশেষ লালিয়ার হাট মাদরাসা মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে বিএনপির এই নেতাকে দাফন করা হয়।