হাটহাজারী মহাসড়কে যানজটতীব্র : ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি ।।

চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের গন্তব্যের প্রায় সবগুলো মহাসড়কে কম-বেশি যানজটের আবর্তে পড়েছে। আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষ একদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি, অন্যদিকে যানজটে নাকাল হচ্ছেন। যাত্রার শুরুতেই অনাহূত ভোগান্তিতে মানুষের চোখে-মুখে একরাশ বিরক্তি। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বয়োঃবৃদ্ধ ও শিশুরা। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের মধ্যে হাটহাজারী পৌরসভার মীরেরহাট ও এগার মাইল পর্যন্ত প্রায় সময় তীব্র যানজট লেগেই থাকে। এই দীর্ঘ যানজটের মূল কারণ হলো সড়কের ওপর দোকান বসানো, যেখানে সেখানে গাড়ি পাকিং করা, সড়কের মাঝপথেই যাত্রী উঠা-নামাসহ পৌর এলাকায় মহাসড়কের উপরে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে প্রতিদিনই এই যানজট লেগেই থাকে।

ঈদে বিশেষ করে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে থেমে থেমে চলছে যানবাহনগুলো। এই দুই পার্বত্য জেলাসহ ২২টি সড়ক-মহাসড়কে ছোট বড় গাড়ি চলাচল করে থাকে। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকায় সড়কগুলোতে দীর্ঘ হচ্ছে গাড়ির লাইন। রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে আবার কিছু কিছু জায়গায় সড়কের উপর দোকান বসায় এই যানযটের কারণ বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক-মহাসড়কে যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের বিশেষ টিমও কাজ করছে। তবে এই যানজটকে কেন্দ্র করে সড়কের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির অভিযোগ করছেন অনেকে।

হাটহাজারী পৌরসভা দোকানদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম বলেন, ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড় বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি সড়কের বিভিন্ন জায়গায় দোকান বসানো, যত্রতত্র গাড়ি পাকিং ও অতিরিক্ত যানবাহন বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র যানজট লেগে থাকছে। তবে সড়কে ট্রাফিক পুলিশের সাথে আরো অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানান তিনি।

ঈদে বাড়ি ফিরতে এরই মধ্যেই দুই পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা ছাড়তে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি সড়কে পণ্যবাহী যান চলাচলও বেড়েছে। মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, ভারী বৃষ্টিপাত ও সড়ক সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যানজট বেড়েছে। বৃষ্টিতে খানাখন্দ আরো গভীর হচ্ছে। গর্তে পড়ে বিকলও হচ্ছে অনেক গাড়ি, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে সেগুলো সরাতে আবার বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। এছাড়া অতিরিক্ত পণ্য বহন করতে গিয়ে যান বিকল হয়ে যাওয়ায় প্রায় সবগুলো মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানজট। আরো রয়েছে ওভারটেক, যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামা করা এবং যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং এর কারণে সৃষ্ট হচ্ছে যানজট। ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষের চাপ বেশি থাকায় যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

এদিকে পরিবহন ও নগর সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কে যানজট শুরু হয়। মহাসড়কের হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট বাজার, ফরহাদাবাদ বাজার, কাটিরহাট বাজার, সরকারহাট বাজার, চারিয়া, মীরেরহাট, হাটহাজারী পৌর সদর, বাজার, বাসস্টেশন, কলেজ গেইট, চবি ১ নম্বর গেইট, নন্দীরহাট, চৌধুরী হাট, ফতেয়াবাদ, বড়দীঘির পাড়, আমান বাজার, বালুছড়া ও অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২/১৩ কিঃমিঃ এলাকায় তীব্র যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে যানজটে আটকে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী, নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের দুর্ভোগের শেষ নেই। পাশাপাশি পৌর এলাকায় আনুমানিক দুই হাজারের অধিক অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা থাকায় যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এই রিকশাগুলোর বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক অবৈধ বলে বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও এই নির্দেশ মানছে না। কি ভাবে আদালতের আইন উপেক্ষা করে এই রিকশাগুলো চলছে তা নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রিকশাগুলো থেকে মাসিক টাকা নিয়ে একটি মহল প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, যাই হোক আদালতের আইন অমান্য করে এই রিকশাগুলো সড়কের উপর অবৈধ ভাবে চলাচল করার অনুমতি কে দিলো?

যানজট সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের চাপ একটু বেশি। আমরাও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি। জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌছতে সড়কের যানজট নিরসন করতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি।

Similar Posts

error: Content is protected !!