হালদায় একটি সেতু বদলে দিতে পারে হাজারো মানুষের ভাগ্য

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি ।।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি- এই তিন উপজেলার মিলনস্থল দিয়ে বয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী। হাটহাজারী উপজেলার নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের নাঙ্গলমোড়া বাজারের পূর্বে হালদা নদীর ওপর একটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে (কান্ন্য হাটের ঘাট)। এই বাঁশের সাঁকো বয়ে দিতে পারে তিন উপজেলার যোগাযোগের দ্রুত মিলনস্থল। যেখানে অবস্থিত কর্মব্যস্ত হাটহাজারী উপজেলার নাঙ্গলমোড়া বাজার। নাঙ্গলমোড়া বাজারের আশেপাশে রয়েছে নাঙ্গলমোড়া উচ্চ বিদ্যালয়, নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়ন পরিষদ, কিন্ডারগার্টেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একটি বেসরকারি ব্যাংক ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিস। তাছাড়া উভয় পাড়ের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সাঁকো পারাপার করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এসব এলাকার জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা গ্রীষ্ম মৌসুমে সাঁকোটি পার হয়ে কোনো প্রকার বিলম্বহীনভাবে আসা-যাওয়া করলেও বর্ষাকালে নদীর স্রোত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে যখন সাঁকোটি ভেঙ্গে পড়ে, তখন শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভে অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তা নিঃসন্দেহে।

নাঙ্গলমোড়া বাজার ঘুরে বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই তিন উপজেলার হাজার হাজার জনসাধারণকে এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন হাটহাজারী উপজেলার নাঙ্গলমোড়া বাজার, স্কুলে এবং পল্লী বিদ্যুৎ ও ব্যাংকসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে আসতে হয়। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের ডিসেম্বর এই হালদা নদীর ওপর নৌকার এক দরিদ্র মাঝি রুহুল আমিনের উদ্যোগে ৩০০ ফুট ও ৫ ফুট প্রশস্ত সাঁকোটি নিজের অর্থে তৈরি করে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। বর্ষা মৌসুমে এই সাঁকো ভেঙ্গে পড়ে গেলে উভয় পাড়ের লোকজনকে নৌকা করে পারাপার করতে হয়।

গ্রীষ্মকালে আবার সেই রুহল আমিন সাঁকোটি নিজে তৈরি করে প্রচুর টাকা ব্যয়ে। বিশেষ করে এই সাঁকো দিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলার নিশ্চিন্তাপুর, তেলেপাড়া, রাউজান উপজেলার নোয়াজিসপুর, ফতেহনগর নদীনপুর এলাকার মানুষকে নানা প্রয়োজনে নদী পার হয়ে নাঙ্গলমোড়া বাজারে আসতে হয়। এতে করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকির মধ্যে নদী পারাপার করতে হয়। তাই এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি হালদা নদীর ওপর একটি ফুট ব্রিজ করা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাউজান উপজেলার পশ্চিম ফতেপুর গ্রামের রুহুল আমিন নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাৎসরিক ছয় হাজার টাকায় ঘাট ইজারা নেন কান্ন্যহাটের ঘাট। শুষ্ক মৌসুমে দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষকে প্রতিজন মানুষ ৫ টাকা, সিএনজি খালি প্রতি গাড়ি ২০ টাকা, মোটর সাইকেল প্রতি গাড়ি ১৫ টাকা, খালি ভ্যানগাড়ি ১৫ টাকা, মালামালসহ ভ্যান গাড়ি ৩০ টাকা, বড় গরু ও মহিষ প্রতিটি ৫০ টাকা, ছোট গরু ২০ টাকা, ছাগল ৩৫ টাকা, রিকশা প্রতিটি ১৫ টাকা পারাপার করে। কিন্তু বর্ষা এলেই শুরু হয় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ। স্রোতের তোড়ে ভেঙে নিয়ে যায় বাঁশের সাঁকো।

সূত্রটি জানায়, বিগত দিনে উভয় এলাকার প্রার্থীরা বারবার নির্বাচন এলে নির্বাচনী বক্তব্য থাকে। তারা নির্বাচিত হলে হালদার ওপর এই সাঁকোটির পরিবর্তে সেতু নির্মাণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু নির্বাচনের পর কার কথা কে শুনে! কার প্রতিশ্রুতি কে রাখে! আবার স্থানীয় প্রশাসনের গরজ আছে বলেও মনে করে না কেউ। এদিকে একটি পক্ষ চাচ্ছে ফুট ব্রিজটি নাঙ্গলমোড়া বাজারে না করে নিছে বাঠি এলাকায় করার। নিছে যদি ব্রিজটি হয় তা হলে তিন উপজেলার জনগণ ব্রিজটির সুবিধা পাবে না।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় প্রশাসনের অনেকেই হালদা সেতু নির্মিত হোক এটাও কামনা করেন না। কারণ প্রতিবার নির্বাচনে এলাকায় সেতুর কথা বলে ধোঁকা দেয়ার দিন শেষ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তিন উপজেলার সংযোগ স্থল নাঙ্গলমোড়া হালদা নদীর ওপর জরুরি ভিত্তিতে সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।

Similar Posts

error: Content is protected !!