মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি ।।
গত তিন দিনের টানা বর্ষণে ও পাহাড়ী ঢলে তীব্র স্রোতে হাটহাজারীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে আছে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার। যাতায়াত সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনে হাট-বাজারে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। জনচলাচলের রাস্তাঘাট ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পাহাড়ী ঢলের তীব্র স্রোতে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল এলাকার মানুষের সাথে সদরের সড়ক মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পানিবন্দী পরিবারগুলো। কিছু কিছু স্থানে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। প্রবল বর্ষণে মহাসড়কের বিভিন্ন দিক দিয়ে পানি স্রোত বেয়ে যেতে দেখা গেছে। পুকুরে চাষ করা মাছ পানির সাথে ভেসে গেছে। এদিকে পাহাড়ী ঢলের চাপ প্রয়োগে খালের পাড় ভেঙে বিভিন্ন এলাকার ফসলি ক্ষেতসহ তলিয়ে গেছে পানির নিচে। হতাশা হয়ে পড়েছে কৃষক পরিবারগুলো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ, ধলই, কাজীপাড়া, হাধুরখীল, পেশকার হাট, মির্জাপুর ইউনিয়ন এলাকার চারিয়া, কাজীপাড়া, ইছাপুর, মোজাফফরপুর, রহিমপুর, জাফারাবাদ, পৌর এলাকার মন্দরি ছড়া পাহাড়ী ঢলের তীব্র স্রোতে পাড় ভেঙ্গে আদর্শ গ্রাম, আলমপুর, খীল পাড়া, চন্দ্রপুর মিরের হাট, মীরের খীল, উত্তর মাদার্শা, দক্ষিণ মাদার্শা, শিকারপুর, বুড়িশ্চর প্রভৃতি এলাকায় বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হালদার ভাঙ্গনে গুমানমর্দ্দন, লাঙ্গলমোড়া, পৌর এলাকার মুহাম্মদপুর, মেখল, ছিপাতলী, বোয়ালীয়ার কুল, গড়দুয়ারা ইউনিয়ন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হালদার তীব্র জোয়ারের স্রোতে কিছু কিছু এলাকায় বাড়ির আঙিনায় পানি ঢুকে পড়েছে। তিন দিনের বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল এলাকার দোকানপাটগুলোতেও পানি লোকালয়ে ঢুকায় ক্ষতিসাধিত হয়েছে। পাহাড়ী ঢল, অতিবৃষ্টিতে বন্যা সৃষ্টি হয়। লক্ষাধিক মানুষ গৃহবন্দীতে পরিণত হয়েছে ।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নৌকাই একমাত্র ভরসা রাখতে হচ্ছে পানিবন্দী পরিবারগুলো। ক্ষেতে খামার মুরগির ও মাছের অনেক খামার পানিতে ভেসে যায়। এতে লাখো টাকার পুকুরে চাষ করা মাছ ভেসে গেছে। ফসলের অনেক জমি অনাবাদীতে পরিণত হয়েছে। পানিবন্দী মানুষেরা এই প্রতিবেদককে তাদের নানান সমস্যার কথা জানান। গড়দুয়ারা ৯নং ইউনিয়নের ইউপি মহিলা সদস্য জান্নাতুন নাঈম বলেন, আমার ৫নং ওয়ার্ডেও অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দী। আমার ঘরেও হালদার জোয়ারে পানি ঢুকে পড়ায় রান্নাবান্না করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘরের সামনেই জাল দিয়ে মানুষ মাছ ধরছে।
গড়দুয়ারা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সরওয়ার মোরশেদ তালুকদার প্রতিবেদককে জানান, প্রবল বর্ষণে হাটহাজারীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। পাহাড়ী ঢলের তীব্র স্রোতে খালের পাড় ভেঙ্গে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হালদার ভাঙনে ও জোয়ারের তীব্র স্রোতে লোকালয়সহ বাড়ির আঙিনায় পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে পড়ছে লক্ষাধিক পরিবার। পাহাড়ী ঢলের তীব্র স্রোতে খালের পাড় ভেঙ্গে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রবল স্রোতের টানে হালদার ভাঙন বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে হাটহাজারী পৌর এলাকার মডেল থানার পাশ দিয়ে মরা ছড়াটিকে বর্তমানে উভয় পাশে পাকা দেওয়াল উপরে স্লাব দিয়ে এই মরা ছড়াটি সম্পূর্ণ রূপে ছোট একটি ড্রেন আকারে নির্মাণ করার ফলে বর্তমানে পাহাড়ী ঢল ও হাটহাজারীর বিভিন্ন নালা-নর্দমার পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। এতে করে পৌর বাজারের পানি থৈ থৈ করছে। এদিকে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে বৃষ্টির পানি ও হালদা নদীর জোয়ারে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার ফলে গ্রামীণ লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। রান্নার কাজে হিমশিম খেতে হচ্ছে গ্রামীণ গৃহস্থদের।