খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।
ভিজিএফ কার্ডধারীদের দশ কেজির স্থলে পাঁচ কেজি চাল দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জের নিকলীর জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম মানিক অভিযোগ অস্বীকার করলেও সরেজমিনে মিলেছে প্রমাণ।
মঙ্গলবার (১২ জুন ২০১৮) দুপুরে জনৈক ব্যক্তির ফোন কলে অবহিত হয়ে এ প্রতিবেদক নিকলীর জারইতলা ইউনিয়নের পুড্ডা বাজারে উপস্থিত হন। এ সময় সামছুদ্দিনের মুদির দোকানে শতাধিক দুঃস্থেÍর ভীড় দেখা যায়। জারইতলা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত ১ আসনের মহিলা সদস্য জেসমিন আরা বিউটি উপস্থিত থেকে প্রত্যেককে দশ কেজি করে চাল দিচ্ছেন। ঘটনা জানতে চাওয়া হলে তিনি উপস্থিতদের দেখিয়ে দেন।
ধারীশ্বর গ্রামের জ্ঞানবানু (৩০), কামালপুরের হেলাল (৩৫), পুড্ডার কুলসুম (৬৪)সহ কমপক্ষে ১০জন জানান, সকাল ১০টায় তারা স্লিপ ও আইডি কার্ড নিয়ে আঠারবাড়ীয়াস্থ ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তাদেরকে একটি ছোট বালতি দিয়ে ৫ কেজি পরিমাণ চাল দিতে চায়। “১০ কেজির স্থলে ৫ কেজি কেন?” এমন প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে পরিমাপকরা। চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলামকে জানালে তিনি “নিলে নাও, না নিলে বাদ দাও” বলে দেন।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, উপস্থিত ইউপি সদস্য জেসমিন আরা বিউটি চেয়ারম্যানের কথার প্রতিবাদ করলে তাকেও বের হয়ে যেতে বলা হয়। চৌকিদার ও চেয়ারম্যান অনুসারী মেম্বাররা মিলে ঠেলে তাদেরকে পরিষদ থেকে বের করে দেয়।
মুদি দোকানী সামছুদ্দিন জানান, জেসমিনের নির্দেশে ৩শ’ লোককে ১০ কেজি করে চাল দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ২শ’র অধিক লোককে দেয়া হয়ে গেছে।
জেসমিন আরা বিউটি বলেন, এ ইউনিয়নে ১৩শ’ ২১ জনকে ১০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা। কিন্তু চেয়ারম্যান চক্র অর্ধেক চাল মেরে দেয়ার ফন্দি এঁটেছে। প্রতিবাদ করায় পরিষদ থেকে বের করে দিয়েছে। দুঃস্থদের কথা চিন্তা করে নিজেই ৩শ’ লোককে চাল দিচ্ছি। তিনি আরো জানান, সরকার নারীদের সম্মানে আইন রাখলেও এই পরিষদে নারীরা উল্টো নিগৃহীতই হয়ে আসছে।
চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম মানিকের সাথে মুঠো ফোনে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি সরেজমিনে দেখার জন্যে এ প্রতিনিধিকে অনুরোধ করে জানান, জেসমিন কেন তার লোকদের নীতি বহির্ভূতভাবে আগে দেয়া হবে না বলে রাগ করে চলে গেছেন। পরিমাপে কম দেয়ার প্রশ্নে তিনি জানান, নানা কারণে পূর্ণ ১০ কেজি দেয়া সম্ভব নয়। জনপ্রতি সাড়ে ৮ থেকে ৯ কেজি দেয়া হচ্ছে, এ কথা সত্যি।
সরেজমিনে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হলে গেটের সামনে চাল নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা যায় কয়েক নারীকে। শাহপুর গ্রামের এতাবদ্দিনের কন্যা মাফুজা (৫৫) জানান, তাকে দেয়া চালের পরিমাণ ৬-৭ কেজি হবে। সঙ্গীয়রাও তাই জানালেন। না আনলে তাও পাবো না, তাই এনেছি।
চালের জন্যে অপেক্ষমান শাহপুর গ্রমের বৃদ্ধ মঞ্জিল মিয়া (৬৫), ছাবেদ (৭০), ছন্দু ভূইয়া সহ কয়েকজন জানান, “একটা বালতি দিয়া মাইপ্যা দ্যা। ৬ কেজি অইলেও সই, নয় কেজি অইলেও সই। নিলে নেও, না নিলে বাদ দেও। তবে য়ুইনছি ৮ কেজি-৯ কেজি অয়। এই ফইলা ফাইতাছিতো, জানি না।” শাহপুর গ্রামের নমেন মিয়া (৬৫) জানান, “কয় কেজি দিছে জানি না। ৭-৮ কেজি হবে মনে অয়। বেইচ্চা দিছি। ১শ ৮০ ট্যাহা দিছে।”
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়া খান জানান, ওই মহিলা সদস্য জেসমিন আমাকে ঘটনাটি জানালে আমি স্থানীয়ভাবে দেখার জন্যে বললাম। না হলে আমি যাবো। পরবর্তীতে মহিলা সদস্য আমাকে আর কিছু না জানালে ভেবেছি বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।