মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন এলাকার লোকজন আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়-স্বজন বাড়ি ও বিভিন্ন আশ্রয়স্থলে। হাটহাজারীর নিম্নাঞ্চল বর্তমানে বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে। নিম্ন এলাকায় কেউ কাউকে দেখার মত সুযোগ নেই। ঘরে ঘরে পানি। রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করতে পাচ্ছে না চুলা। চুলাও ডুবে গেছে পানিতে। নিম্ন এলাকার মানুষের ঈদের কেনাকাটা সহ আনন্দও হারিয়ে ফেলেছে। তারা নিজেদের রক্ষা করতেই ব্যস্ত থাকছেন সর্বদা। পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টির পানি এবং হালদার ভাঙ্গনে জোয়ারের পানির তীব্র স্রোতে নিম্ন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। এ ধরনের বন্যার পানি বিগত ত্রিশ বছরেও দেখা যায়নি বলেও জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।
উপজেলা জুড়ে আনুমানিক ৩ শতাধিক পুকুর ও মাছের প্রজেক্ট ডুবে গেছে। এতে করে মৎসচাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে পুকুরসহ বিভিন্ন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি বাড়িঘরে ও লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। পাশাপাশি দুই পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িসহ উত্তর চট্টগ্রামে ২২টি সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া বেশ কয়েকটি সড়কও বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রামের রাউজান, হাটহাজারী, গহিরা, ফরহাদাবাদ, ফটিকছড়ি, কাপ্তাই সড়কে যানবাহন না থাকায় চট্টগ্রামের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। সড়কের উপর দিয়ে তীব্র পানির স্রোতের কারণে যানবাহন তেমন চলাচল করছে না। রমজানে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপে সংকট দেখা দিয়েছে যানবাহন। গুটিকয়েক যানবাহন চলাচল করলেও অধিক ভাড়া হাঁকিয়ে নিচ্ছে বলেও যাত্রীরা অভিযোগ করেন।
তবে যানবাহন শ্রমিকরা জানান, চারদিকে পানি আর পানি। কিভাবে গাড়ি চালাবো। যে সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করে সে সড়ক দিয়ে এখন নৌকা চলছে। এদিকে রমজানের মধ্যে বন্যাদুর্গত এলাকায় গত তিনদিন ধরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকতার উননেছা শিউলীর নেতৃত্বে প্রায় তিনটি দল বন্যাদুর্গতদের পাশে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে। চিড়া, মুড়ি, চিনি, মোমবাতি, বিস্কুট, ম্যাচসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকতার উননেছা শিউলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদসহ গত মঙ্গলবার থেকে বিরতিহীন ভাবে খোদ নিজেরাই নৌকা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে আক্রান্ত এলাকায় গিয়ে ঘরে ঘরে দুর্গতদের মাঝে এ খাদ্যসামগ্রী তুলে দিচ্ছেন। আনুমানিক তিন হাজারের অধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। আরো পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবেন বলে জানান। পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের সুবিধার্থে উপজেলা প্রশাসন বেশ কয়েকটি আশ্রয়স্থল খুলেছে। এসব আশ্রয়স্থলে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। পাশাপাশি খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
উপজেলা তিন শতাধিক পুকুর ও বিভিন্ন মাছের প্রজেক্ট ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব পুকুর ও মৎস খামারের মাছ অতিরিক্ত বন্যার পানির কারণে বাইরে চলে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতি আনুমানিক কোটি টাকা ছড়িয়ে যাবে বলে জানান মৎস চাষীরা। সদ্য হালদা নদী হতে সংগৃহীত মা মাছের ডিমের পোনা চাষ করেছে বহু মানুষ। এসব মাছের চাষগুলো করা হয়েছে পুকুরে। কিন্তু সেসব পুকুর বন্যার পানিতে একাকার হয়ে গেছে। উপজেলার আংশিক ধলই ইউনিয়ন, মির্জাপুর ইউনিয়ন, গুমানমর্দন ইউনিয়ন, নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়ন, ছিপাতলী ইউনিয়ন, মেখল ইউনিয়ন, গড়দুয়ারা ইউনিয়ন, উত্তর ও দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়ন, চিকনদন্ডি ইউনিয়ন, শিকারপুর ইউনিয়ন, বুড়িশ্চর ইউনিয়ন ও সর্বশেষ হাটহাজারী পৌরসভা এসব এলাকায় বন্যার পানি বর্তমানে থৈ থৈ করছে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জুন ২০১৮) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের আমানত আলী মুন্সির মসজিদ থেকে পূর্ব আলমপুর ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত কোমর পরিমাণ পাহাড়ি ঢলের ও হালদার পাড় ভাঙ্গনে জোয়ারের পানি সড়কের বুকে থাকার কারণে যানচলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। পৌর এলাকার আব্বাসিয়ার পুল থেকে চারিয়া বুড়িপুকুর পাড় সড়ক প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঈদ ঘরমুখো যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে দেখা গেছে। যানজট নিরসনের ব্যাপারে হাটহাজারী থানা পুলিশ নিরলসভাবে পরিশ্রম করেও যানজট নিরসন করতে হিমশিম খাচ্ছে।