চাঁই’ তৈরির ধুম পড়েছে হাওরে

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

চাঁই, পলো বা পঁলুই, উইন্না, ঠেলা জাল, ধর্ম জাল, পানি কাটা, ঘুরানো জাল, ঝাকি জাল বা উড়াইন্না জাল, খুইচ প্রভৃতি অঞ্চলভেদে নামের ভিন্নতা থাকলেও মাছ ধরার উপকরণ হিসেবে “চাঁই”-এর একটি অন্যরকম জনপ্রিয়তা রয়েছে জেলেদের কাছে। যার প্রভাব হাওর অঞ্চলেই বেশি। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং সিলেট অঞ্চলে এর ব্যবহার বেশি লক্ষণীয়। এই বিশেষ ধরনের ‘চাঁই’ কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী; নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী, মদন এবং সিলেট অঞ্চলের হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার হাওর এলাকায় ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের হাওরবেষ্টিত এলাকা ইটনা উপজেলার দাসপাড়া, এলংজুড়ী, হাজারীকান্দা, তাড়াইল উপজেলার চৌগাঙগা, নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি, মদন, নিকলী উপজেলার সিংপুর, মিঠামইন উপজেলার সিংগা গ্রামে এ ‘চাঁই’ তৈরির ধুম পড়েছে প্রত্যেকটি কারিগর পরিবারে। যারা বানানোর কৌশলে রপ্ত তারাই কেবল এই ‘চাঁই’ তৈরি করছেন। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এর ব্যাপ্তি। এই ‘চাঁই’-এর বিশেষত্ব হচ্ছে, ‘চাঁই’টি অন্যান্য সাধারণ ‘চাঁই’-এর চাইতে আকারে অনেক বড়। এটি শুধুমাত্র চিংড়িমাছ ধরা কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি চাঁই দিয়ে একবার প্রায় ৫-৭ কেজি চিংড়িও ধরা পড়ে।

ইটনা দাসপাড়া গ্রামের কারিগর মোহনলাল দাস জানান, “বর্ষার শুরুতেই বিশেষ করে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ় এই তিনমাস এর চাহিদা বেশি থাকে।”

কারিগর জহরলাল দাস জানান, ‘চাঁই’ তৈরিতে প্রয়োজন হয় বাঁশের শলা, সুতা এবং প্লাস্টিকের চট। এতে খরচ হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টি চাঁই তৈরি করতে পারি।’

একটি পরিবারে মহিলা, পুরুষ, কিশোর, কিশোরী, যুবক সবাই তৈরি করতে পারেন এই ‘চাঁই’। হাওর অঞ্চল আবহাওয়ার দিক দিয়ে ফসলি জমি ৬ (ছয়) মাস পানির নিচে আর বাকি ৬ (ছয়) মাসে বোরো ধান চাষে ব্যস্ত সময় কাটান কৃষকরা। বোরো ধান পাকা এবং কাটার সাথে সাথে উজানের বৃষ্টির পানিতে ভরে উঠে নদী আর নদীর চর। আর পানিবৃদ্ধির সাথে সাথেই বাড়তে থাকে মাছের আনাগোনা। পাশাপাশি ‘চাঁই’-এর চাহিদাও। বর্ষা শুরু হতেই ঘরে বসে তৈরি শুরু হয় চাঁই তৈরির কাজ। জেলেরা এসে দাম-দর করে নৌকা ভরে নিয়ে যান এই চাঁই। একেকটি ‘চাঁই’ বিক্রি হয় ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।

এলংজুড়ি ইউনিয়নের স্বল্প হাতকবিলা গ্রামের অনিন্দ্য চন্দ্র দাস জানান, ‘প্রতি বছর নিয়মিত ‘চাঁই’ তৈরির কাজটি করে থাকি। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে পারতেছি।’

ধনপুর ইউনিয়নের প্রধান শিক্ষক প্রণব কান্তি চৌধুরী জানান, ‘চাঁই’ তৈরি একটি সৃজনশীল কাজ। এটিকে দিন দিন পেশা হিসেবে নিচ্ছেন অনেকেই। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে হয়ত শিল্পে রূপ দেয়া সম্ভব’।

Similar Posts

error: Content is protected !!