রাশিয়া বিশ্বকাপে এন্টি ডোপিং বিভাগে বাংলাদেশি মতিন

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

ফুটবল ভালোবাসেন। ফুটবলারই হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা-মায়ের চোখ রাঙানিতে বেশিদূর এগুতে পারেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের মো. আবদুল মতিন। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও ৩২ বছরের যুবক এখন ফুটবলেরই সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফায় কাজ করছেন।

রাশিয়ায় চলমান বিশ্বকাপে ফিফার গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এন্টি ডোপিং দলের সদস্য ডাক্তার মতিন। কাজ করছেন দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ ভেন্যুতে। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ফিফার এন্টি ডোপিং বিভাগে কাজ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছেন মতিন। ফিফায় কাজ করে দেশের সম্মান বাড়ানোই তার একমাত্র লক্ষ্য।

যোগ্যতা প্রমাণ করেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ডা. আবদুল মতিন। নরসিংদীর জামিয়া কাসিমিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে রাশিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে ২০০৫ সালে দেশটির রোস্তভ স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। এক বছর রাশিয়ান ভাষা শিক্ষা কোর্স সম্পন্নের পর শুরু করেন ৬ বছরের মেডিকেল কোর্স। ২০১২ সালে এই কোর্স শেষ করে সেন্ট পিটার্সবার্গ নর্থ ওয়েস্টার্ন স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সেখানেই হৃদরোগ বিভাগে পিএইচডি করছেন আবদুল মতিন।

ফিফার এন্টি ডোপিং বিভাগে কাজ করতে রাশিয়া থেকেই পরীক্ষা দিয়েছিলেন মতিন। তার মতো আরো অনেক রাশিয়ানও পরীক্ষা দিয়েছিলেন বিশ্বকাপে ফিফার এন্টি ডোপিং বিভাগে কাজ করতে। গোটা বিশ্ব থেকে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে থেকে ১১ বার সাক্ষাৎকার নিয়ে ফিফা বেছে নিয়েছে ৪৪ জনকে। তার মধ্যে আছেন বাংলাদেশের ডা. আবদুল মতিন। অনেক রাশিয়ান আবেদন করলেও কারোরই ভাগ্যে জোটেনি ফিফার গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজ করার সুযোগ।

বাছাই করা ৪৪ জনকে বিশ্বকাপের ১১ শহরে দায়িত্ব দিয়েছে ফিফা। সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে কাজ করছেন মতিনসহ ৪ জন। তাদের প্রধান হিসেবে আছেন প্রফেসর ক্লিন ফিল্ড জেমস নামের এক জার্মান। যার পদবী ডিসিও (ডোপিং কন্ট্রোল অফিসার)। তার অধীনে যে চারজন কাজ করছেন তাদের মধ্যে ডিসিসি (ডোপিং কন্ট্রোল চ্যাপেরন) হিসেবে এক নম্বরে আছেন বাংলাদেশের মতিন। বকি তিনজন ইতালি, তিউনিসিয়া ও নাইজেরিয়ার।

ডোপিং পরীক্ষা দিতে হয় বড় বড় সুপার স্টারদেরও। প্রতি ম্যাচে দুই দলের ২ জন করে খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয় নমুনা পরীক্ষার জন্য। তবে সেটা অবশ্যই সন্দেহের ভিত্তিতে নয়, লটারির মাধ্যমে। ম্যাচের বিরতিতে দুই দলের ম্যানেজারের উপস্থিতিতে লটারির মাধ্যমে ৪ জন নির্বাচন করা হয়।

ম্যাচের পর ড্রেসিং রুমে প্রবেশের আগেই নির্বাচিত ৪ খেলোয়াড়কে ডোপিং কন্ট্রোল নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রক্ত ও মূত্র সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেয়া হয় সুইজারল্যান্ড। ফিফার ল্যাবরেটরিতে সেগুলো পরীক্ষা করা হয়। ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত নমুনা সংরক্ষিত থাকে ফিফার ল্যাবরেটরিতে। যদিও ডোপ টেস্টের রেজাল্ট ২ মাসের মধ্যেই দিয়ে দেয় ফিফা।

ব্যক্তি জীবনে কুরআন-এ হাফেজ ডা. আবদুল মতিন। বিয়ে করেছেন একই জেলার জান্নাতুল মাওয়াকে। ঢাকার সমরিতা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত তার স্ত্রী। মতিন ও জান্নাতুল মাওয়ার একমাত্র ছেলে আজনাফ সাফওয়ানের বয়স মাত্র ৫ মাস। বিশ্বকাপে এন্টি ডোপিং ডিপার্টমেন্টে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে ফিফার সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকতে চান মতিন। না হলে তার লক্ষ্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ করা।

বিশ্বকাপে কাজ করে যে সনদ পাবেন মতিন সেটাকেই বিশাল মনে করছেন তিনি। এর বাইরে তেমন কিছু চাওয়ার নেই তার। ‘আমি একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ফিফার গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কাজের সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার এবং আমার দেশের জন্য গর্বের। আমি কাজের মাধ্যমে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই’- জাগো নিউজকে বলছিলেন ডা. আবদুল মতিন।

ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নরসিংদীতে ছাত্রজীবনে জেলা লিগ ছাড়াও খেলেছেন জেলার অনূর্ধ্ব-১৪ দলে। বাবা-মায়ের শাসনে খেলা ছেড়ে দিলে ফুটবল ছাড়েননি মতিন। পরে নিজ জেলার লিগে ধারাভাষ্য দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপে ধারাভাষ্য দিয়ে পুরস্কারও জিতেছেন মতিন। মাদ্রাসা জীবনে পুরস্কার পেয়েছেন জাতীয় কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে। একাধিকবার সেরা হয়েছেন উপস্থিত বক্তৃতায়ও।

সূত্র : যেভাবে ফিফার এন্টি ডোপিং বিভাগে বাংলাদেশের মতিন  [জাগো নিউজ, ২৫ জুন ২০১৮]

Similar Posts

error: Content is protected !!