আবদুল্লাহ আল মহসিন||
নিকলী উপজেলায় প্রায় পাঁচশত বছরের পুরনো নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে| নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে ঘোড়াউত্রা নদীর কূলে বেড়ীবাধে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল| অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কিশোরগন্জ-৫ বাজিতপুর-নিকলী আসনের সংসদ সদস্য আফজল হোসেন মঞ্চে বসে লাখো জনতার সাথে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন|
ছবি : কারার দিদারুল মনির তোফায়েল ও কারার সামেদুল
ভিডিও : হাবিবুর রহমান
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে নিকলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কিশোরগন্জ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মাহবুব-উল-আলম, র্যাব-১৪ কমান্ডার মেজর মোঃ রিয়াজুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইসহাক ভূইয়া, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ আফতাব উদ্দীন মোল্লা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রওশান আক্তার, নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম প্রমুখ| এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলার সরকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সর্বস্তরের মানুষ নিকলীর লোকজ সংস্কৃতির উপাদান নৌকা বাইচ উপভোগ করতে দুপুর থেকেই ঘোড়াউত্রা নদীর কূলে বেড়ী বাধে জমায়েত হতে শুরু করেন|
নৌকা বাইচ উপভোগ করতে শুধু কিশোরগন্জ জেলা নয়, রাজধানী ঢাকা এবং পাশ্ববর্তী গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, সুনামগন্জ, আজমিরীগন্জ, হবিগন্জ, সিলেট, বি-বাড়িয়া সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন নৌকা বাইচ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে ভিড় জমায়| এবারের উৎসবে আরো একটি বৈচিত্র্য ছিল ঈদ উৎসব| তাই নৌকা বাইচ থাকায় ঈদের আনন্দটা আরো বেশি উৎসবে পরিণত হয়েছে|
ধারণা করা যায় যে, এবারের নৌকা বাইচে প্রায় ৩ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়| সুবিধাজনক জায়গায় আসন না পেয়ে প্রতিযোগিতা দেখার জন্য অনেকে আশপাশের গাছপালা ও বাড়ীর আশপাশে দাড়িয়ে থাকে| নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে নিকলীর ঘরে ঘরে চলছে উৎসব আমেজ ও আতিথেয়তা| এবারের নৌকা বাইচে মোট ১১টি নৌকা অংশগ্রহণ করে| প্রতিযোগীরা ঐতিহ্যবাহী আড়াঙ্গী দৌড়ের নাও প্রভৃতি নৌকা নিয়ে প্রচন্ড উত্তেজনাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে|
নৌকা বাইচ ২০১৫ প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অর্জন করে মোহরকোনার নৌকা, ২য় হয় গোবিন্দপুরের নৌকা ও ৩য় হয় কারার বুরহান উদ্দীন চেয়ারম্যানের নৌকা| বিজয়ী ১ম ও ২য় নৌকাকে ১টি করে ফ্রিজ, ৩য় নৌকাকে রঙ্গীন টেলিভিশন প্রদান করে|
অংশগ্রহণকারী অন্যান্য নৌকাকে সান্ত্বনা পুরস্কার প্রদান করা হয়| দেশের সনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান আফজাল সুজ এই পুরস্কারের ব্যবস্থা করে|
উল্লেখ্য, কিশোরগন্জের ইতিহাসবিদদের মতে, নিকলীতে নৌকা বাইচের সূচনা করেন মসনদে আলা বীর ঈশা খাঁ| মোগলদের পরাজিত করে তিনি ভাটিতে রাজ্য স্থাপন করেন| ভাটি রাজ্য রক্ষা ও বিস্তৃতির জন্য নৌ শক্তি ছিল প্রধান মাধ্যম| জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলায় তার নৌ বাহিনির ১টি গোপন ঘাটি ছিল| আর সেই নৌ ঘাটির বার্ষিক মহড়া অনুষ্ঠিত হতো সোয়াইজনী নদীতে| সেই থেকে নৌকা বাইচের প্রচলন শরু| ঈসাখা এভাবেই নিকলীতে নৌকা বাইচের প্রচলন ঘটে| এখন আর এটি সোয়াজনী নদীতে হয়না|লোক সমাগম বেশী হওয়ায় এখন এটি বেড়ি বাধে অনুষ্ঠিত হয়|