দ্বীপের মত গ্রাম বাড়ি

আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।
হাওর উপজেলা নিকলী বর্ষায় টইটুম্বুর হয়ে যায়। চারদিক বেষ্টন করে অথৈ হাওরের পানি। উপজেলার সর্বত্র জালের মত ছড়িয়ে আছে হাওর নদী। বড় হাওর, জোয়ানশাহী হাওর, সোয়াইজনী, রোদা, নরসুন্দা, ধনু আর ঘোড়াউত্রার তীরে দাড়িয়ে আছে দীপের মত গ্রাম বাড়ি। ধনু নদীর তীর ও হাওরের বুকের গ্রাম বরাটিয়া, ডুবি, সিংপুরকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে বড় আকারের ইঞ্জিনচালিত নৌকা নোঙর ফেলেছে।

dip_vil3
লিলুয়া বাতাসে চারদিক কল কল ঢেউ ছুঁয়ে যায় এসব গ্রামে। হাওর প্রকৃতির মাঝে এসব গ্রাম দেখলে আমাদের মনে পড়ে যায় গভীর সমুদ্রের মাঝে এক খণ্ড দ্বীপের দৃশ্য। ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে গোড়াদিঘা, ছাতিরচর, জোয়ানশাহী, পরগণার শেষ স্মৃতিচিহ্ন গ্রাম। বড় বড় ঢেউ আফাল আর নদী ভাঙ্গনের আঘাত সয়ে বীর দর্পে দাড়িয়ে আছে এ দুটি গ্রাম। বর্ষায় এসব দ্বীপ গ্রাম পর্যটন ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে। হাওর পর্যটন সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে পারলে দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিয়াসুদের মুগ্ধ করবে এসব গ্রাম। এ ছাড়াও রুওয়া বিলের পাশের গ্রাম গুরুই, ছেত্রা, নানশ্রী, দেরুয়াইল যে দিকে তাকানো যায় না কেন, মাঝে মাঝে চোখে পড়ে ডুবো বাড়ি। অপরূপ সৌন্দর্যে হাওর-কন্যার বধ রূপ। মৃদু জলতরঙ্গের নাচন। আকাশে জলজ পাখির ডানার শব্দ।


পিছিয়ে পড়া এসব গ্রামের বর্ষায় একমাত্র বাহন নৌকা। ডিঙ্গি, কুশা ও ইন্জিনচালিত নৌকা দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যেতে হয়। এসব গ্রাম উন্নয়ন সুবিধা থেকে পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ হয় স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিষয়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্রসূতি, গর্ভবতি, নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের চিকিৎসা সেবা বাধাগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে সিংপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রত্যন্ত হাওরের লোকজন জরুরি চিকিৎসাসেবা ঠিকমত পায় না। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র দূর হওয়ায় স্থানীয় যানবাহনে রোগীকে নিয়ে যেতে আরো কষ্ট বাড়ে। এজন্য প্রত্যন্ত হাওরের গ্রামে নৌ এম্বুলেন্স চালু করা দরকার। সব মিলিয়ে হাওরের দ্বীপ গ্রামের উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা আরো গতিশীল করতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!